আবদুল হাইয়ের খোঁজ নেয়নি কেউ

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
আবদুল হাই। পেশায় একজন দিনমজুর। বয়স ৪০। সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে পা হারিয়ে এখন তিনি মানবেতর দিন-যাপন করছেন। ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁর কোনও খোঁজ নেয়নি কেউ। দু-মুঠো ভাত আর সু-চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

আবদুল হাইয়ের বাড়ি পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার হাপানিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত আবদুল খালেক। আরেফিন জিসান নামে ছয় বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে তাঁর ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১০মার্চ পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের পোড়াবাড়িয়া মেলা বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.জুলহাস হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানে দুটি আধা পাকা ও পাঁচটি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়। ওই উচ্ছেদ অভিযানে শ্রমিকের কাজ করছিলেন আবদুল হাই। ঘর ভাঙার সময় একটি টিন এসে আবদুল হাইয়ের পায়ের ওপরে পড়ে। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর বাম পায়ের চারটি আঙুল কেটে ফেলে দেন। ১৫দিন চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে না পারায় তাঁর পাকস্থলিতে জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসা করাতে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরে তিনি মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা জোগাড় করে অস্ত্রোপচার করান। কিন্তু অবস্থা জটিল হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁর পেট কেটে মলদ্বার বাইরে বের করে ঝুলিয়ে দেন। এরপর থেকে তিনি পা ও পাকস্থলি নিয়ে খুবই দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন।

আবদুল হাই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সরকারি কাজ করতে গিয়ে পঙ্গু হলাম। পা’টি এখনো ভালো হয়নি। টাকার অভাবে ওষুধ খেতে পারছিনা। লাঠিতে ভর করে হাঁটতে হচ্ছে। পাকস্থলি নিয়েও বিপাকে আছি। কোনো কাজ করতে পারছিনা। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই তা দিয়েই কোনো রকমে দিন চলছে। ওষুধ কেনার টাকা পাব কোথায়। সরকার যদি আমার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতো তবে আমি খুবই শান্তি পেতাম।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তাঁর চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি-না আমি চেষ্টা করে দেখব।

Share.