কাশফুলের মুগ্ধতায় মেতেছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
শরৎ সেজেছে কাশফুলে, ওই ধু-ধু বালু চরে। সাদা মেঘের শতদল যেন উড়ছে, নদের কুল জুড়ে। নদের ধারে শুভ্র কাশবন। কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতি প্রেমীদের মন। নদের তীর কত যে নিবিড়, উদাস করা মন। ফুলের মাঝে পতঙ্গরা উড়ে, প্রজাপতিরা ধরে আড়ি। কাশ কন্যাদের হাসির টানে প্রিয়সীরা দেয় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি।

এমনই এক অপরূপ দৃশ্য ফুটে উঠেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের কূল জুড়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাশফুলের শুভ্রতায় ভরে গেছে নদের পাড়। যেন সবুজ পেরে সাদা শাড়ি পড়ে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে আছে কাশ কন্যারা। আর মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে। মনে হয় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমীদের।

স্থানটি পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে ঠিক দক্ষিণ দিকে চার কিলোমিটার গেলেই মির্জাপুর বাজার। বাজারের পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের খেয়াঘাটে গিয়ে নৌকায় চড়ে ওপারে গেলেই দেখা মিলবে কাশ কন্যাদের রাজত্ব। স্থানটি তালতলা নামে পরিচিত। কারণ, সেখানে সারি সারি তাল গাছও রয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিবছর আগস্টের শেষের দিকে কাশফুল গুলো ফুটতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর মাসে এসে সাদা কাশফুলে ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। অক্টোবরের মাঝখানে ফুলগুলো ঝরে যায়। তারা আরও জানান, পাকুন্দিয়া উপজেলায় বিনোদনের জন্য তেমন কোনো জায়গা না থাকায় প্রকৃতিতে চলমান শরতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের বিস্তীর্ণ কাশবনই এখন প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একমাত্র বিনোদন স্থল। কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি প্রেমীরা এ স্থানে ঘুরতে আসেন। প্রতিদিনই কাশবন এলাকায় দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন একটু বিনোদন ও প্রশান্তির আশায় স্বপ্নের এ কাশফুলের রাজ্যে। বিকেল গড়াতেই দেখা যায়, দলবেঁধে তরুণ-তরুণীরা আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ ঘুনঘুন করে গান গেয়ে, কেউ ভিডিও কিংবা সেলফি তুলে সময় পার করছেন। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দে সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদের খেয়াঘাটে কাশবনে স্বামী ও পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন চরফরাদী গ্রামের রুমকি আক্তার। তিনি বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভাল লাগছে। কাশবনের শুভ্রতায় আমরা মুগ্ধ। প্রকৃতি যদি সবসময়ই এমন থাকতো খুবই ভাল লাগতো।

কাহেৎধান্দুল গ্রাম থেকে ঘুরতে আসা কলেজ পড়–য়া ছাত্র আরমান আহমেদ বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের চরের এ কাশবনের মনোরম দৃশ্য সত্যিই মনোরম। এ দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাইতো ব্রহ্মপুত্রের এ চরকে কাশফুলের রাজ্য বলা হয়।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন, কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। এর বৈজ্ঞানিক নাম ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ধহঃধহবঁস. নদীর ধারে, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশবন বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। এর কারণ হলো, নদীর তীরে পলি মাটির আস্তর থাকে এবং এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। কাশফুল পালকের মতো নরম এবং ধবধবে সাদা। গাছটির চিরল পাতার দুপাশ খুব ধারালো।

Share.