কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা

0

শরফ উদ্দিন হোসাইন জীবনঃ
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের ছয়না গ্রামে প্রায় ১৫ বছর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাধারণ গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে কিশোরগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গাছ আর বাঁশকে খুটি বানিয়ে তার টেনে (সার্ভিস লাইন) বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সংস্কার করেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব লাইনে প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। কোথাও কোথাও বাঁশকে খুঁটি বানিয়ে জমি থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ ফুট উপর দিয়ে টেনে নেওয়া হয়েছে সঞ্চালন লাইন। আর এ কারণে প্রায়ই তার ছিড়ে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

জরাজীর্ণ বিদ্যুৎলাইন ও লো ভোল্টেজ সত্ত্বেও একের পর এক এলাকায় নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে রাস্তার পাশ দিয়ে জীবন্ত গাছ আর বাঁশকেও খুটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ কারণে প্রায়ই তার ছিঁড়ে থাকায় অনেকেই অসাবধানতাবশত ওই গাছ ও বাঁশের খুঁটিতে স্পর্শ করে দুর্ঘটনার শিকার হোন। বর্তমানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ থাকলেও এই বিদ্যুৎয়েই যেন কাল হয়েছে এলাকাবাসির। এছাড়া লো ভোল্টেজের কারণে নষ্ট হচ্ছে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ও বৈদ্যুতিক লাইট। এতে করে জীবনের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন গ্রাহকরা।

ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া গ্রাহক মো. শামীম, সাইদুর রহমান, মো. হারুন, উজ্জল মিয়া, মামুন মিয়া, খায়রুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য গ্রাহকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমানে খুঁটি না থাকায় একই খুঁটি থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হচ্ছে। আর এ কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎ শকের কারণে খুঁটিতে আগুন ধরে যায়। এতে বিভিন্ন সংযোগ পুড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাদনকারী ইলেক্ট্রেশিয়ান আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া দূরে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য খুঁটি না থাকায় বাঁশ ও জীবন্ত গাছকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। আর এ কারণে ঝড়-বৃষ্টির সময় তার ছিড়ে গিয়ে ঘর বাড়িতে আগুন ধরার পাশাপাশি বিদ্যুতায়িত হয়ে অনেকেই মারা যান। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমানে বিদ্যুৎ না থাকায় সকাল-৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে অসহনীয় যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। আর এ কারণে প্রায়ই ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। যেমন রয়েছে লো-ভোল্টেজ তেমনি রয়েছে ভুতুরে বিদ্যুৎ বিল।

নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ কিভাবে পেয়েছেন? জানতে চাইলে গ্রাহকরা বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের মিটার রিডার ও স্থানীয় ইলেক্ট্রেশিয়ানের মাধ্যমে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ করে ওই বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন তারা। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বাঁশ ও গাছ দিয়ে প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার দূরেও নেওয়া হয়েছে এমন বিদ্যুৎ সংযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এরকম ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন বিদ্যুৎবিভাগের কাছে একের পর এক জনদুর্ভোগের কথা জানিয়ে আসলেও কোন প্রকার কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। এ থেকে পরিত্রান চান সাধারণ গ্রাহকরা।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাঃ সালাহ উদ্দীন প্রথমে কথা বলতে রাজি হলেও পরবর্তীতে কথা বলতে অপারকতা জানান।

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ’ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই বিদ্যুৎ যেন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কারণ না হয়ে, হয় উন্নয়নের কারণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করবে বিদ্যুৎবিভাগ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

Share.