কিশোরগঞ্জে বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

0

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কালের বিবর্তন আর শিল্পায়নের যুগে কিশোরগঞ্জে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প। যদিও জেলার কোন কোন উপজেলায় বংশ পরম্পরায় এখনও এই মৃৎ শিল্পকে আকঁড়ে ধরে বেঁেচ আছে অনেক পরিবার। তবে করোনার কারণে দুই বছর যাবত জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করতে না পারায় ভিন্ন পেশায় ধাবিত হচ্ছে। হারাতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য আর বাংলার সংস্কৃতি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন নিকলী উপজেলার পালপাড়া গ্রামে বংশ পরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাহারি ডিজাইনের জিনিসপত্র তৈরী করে জিবীকা নির্বাহ করে আসছিল কয়েকশ পরিবার। পরিবারের নারী-পুরুষ সকলেই এই কাজের সাথে জড়িত। সময়ের দাপটে প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈরি জিনিসপত্রের কাছে হার মেনেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র, বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ারও দৃশ্যপট। তবুও বেচে থাকার দাগিদে বাপ দাদার এই শৈল্পিক এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে প্রতিদিনই অর্থনৈতিক সংগ্রাম করছে এই পেশার সাথে জড়িত নারী-পুরুষরা।

তৈরী করছেন মাটির তৈরী পুতুল, হাড়ি-পাতিল, ডাকনাসহ বিভিন্ন ডিজাইনের সৌকিন জিনিসপত্র। তবে বর্তমানে জিনিসপত্র তৈরী করতে এটেল মাটি, জালানি কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়ায় বিপাকে এই মিৎ শিল্পীরা। প্রতিবছরই দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখসহ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী কিছু উৎসব-পার্বণে এর কদর বাড়ে। ফলে এ সময়গুলোতে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেন এই মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু দুই বছর যাবত করোনার কারণে কোন উৎসব-পার্বন না থাকায় এই পেশার সাথে জড়িত সকলেই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এখন দিশেহারা।

নিকলী উপজেলায় মোট ৩২টি মৃৎ শিল্প পরিবারে ১৫০ লোকের বসবাস। ইতিমধ্যে ৮টি পরিবারকে ১৮হাজার টাকা করে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারের সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ মনির।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, জেলায় মোট ৫৭০টি মৃৎ শিল্প পরিবার রয়েছে। জেলায় সরকারের প্রণোদনার আওতায় মৃৎ শিল্পীদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি এই পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক এই মৃৎ শিল্প এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এ টিকিয়ে রেখেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। তাই বাংলার এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Share.