তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিকৃতির অভিযোগ

0

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ধলা গিরিশ চন্দ্র পাল চৌধুরী জমিদার বাড়ির ভিতরে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিকৃতি করার অভিযোগ উঠেছে তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারেক মাহমুদের বিরুদ্ধে। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও কালের সাক্ষী এই জমিদার বাড়িটি উপজেলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিকৃতি করে সীমানা প্রাচীর তৈরি করায় জায়গা দখলের পায়তারা করছে ভূমি দস্যুরা। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরও অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা জমিদার বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তাড়াইলবাসীর গর্বের জায়গা। এই উপজেলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই জমিদার বাড়িটি। বর্তমানে জমিদার বাড়ির মূল ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে ধলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে।

এই ভূমি অফিসকে ঘিরে জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহনকারী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বুকে অদৃশ্য ইঙ্গিতে হাতুড়ি শাবল চালিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মান করা হয়েছে। এতে করে জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সীমানা প্রাচীরের বাহিরে থাকা জায়গা-জমি দখলের পায়তারা করছে ভূমিদস্যুরা। সীমানা প্রাচীর তৈরির কারণে জমিদার বাড়ির মূল ফটক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশ ও দেশের বাহির থেকে পর্যটকরা দেখতে আসলেও দেয়ালের কারণে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না।

জমিদার বাড়ির সু-উচ্চ শক্তিশালী সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ৫২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নিরাপত্তার অজুহাতে অবৈধভাবে ১২ লক্ষ টাকায় গড়ে তুলেছেন আরেকটি সীমানা প্রাচীর। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ সকালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জমিদার বাড়ির ভেতরে নির্মিত সীমানা প্রাচীরের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তাড়াইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবু রিয়াদ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় শেষে অবৈধ সীমানা প্রাচীরটি ভেঙ্গে ফেলার আশ্বাস দেন।

১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদার ও তার স্বজনরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান ভারতে। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে জমিদারের অনুপস্থিতিতে এ বাড়ি এস.এ রেকর্ড অনুমোদন হয় জমিদারের নামেই। ভূমি অফিসের তথ্য থেকে জানা গেছে, ৯টি ভিন্ন ভিন্ন দাগে প্রায় ১০ একর ভূমি নিয়ে ছিল এ জমিদার বাড়ি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় সমুদয় ভূমি ও বিভিন্ন স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় সরকার। দেশে রাজনৈতিক পালা বদল ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় ইতিমধ্যে জমিদার বাড়ির প্রায় ৫ একর ভূমি অবৈধভাবে দখলদারদের হাতে চলে গেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় মূল বাড়িসহ প্রায় সাড়ে ৫ একর ভূমি এখন দখলমুক্ত রয়েছে। তবে এ ভূমিতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ধলা উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিস, ধলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও জমিদারের কাচারী নামীয় ভবনে অস্থায়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৬টি ভিন্ন ভিন্ন দাগে ২ একর ৫৩ শতাংশ ভূমি রয়েছে জমিদার বাড়ির মূল অংশে। মুগল ও পাশ্চাত্য রীতির মিশ্রনে চুন সুরকি দিয়ে গড়া বাড়ির মূল অংশে দুটি সিংহের মুখোমুখি অবস্থানের প্রতিচ্ছবি সংবলিত দৃশ্যনন্দন মূল ফটক, জমিদারের মূল কাচারি, ভগ্নস্তুপে পরিণত অতিথিশালা, বাড়ির সামনে পিছনে ২টি পুকুর ও একটি সুবিশাল খেলার মাঠ।

দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে এর স্থাপত্য নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ আজও জানান দেয় জমিদারের অতীত জৌলস। অযত্ন অবহেলায় আর সংস্কারের অভাবে প্রাচীন ভবনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জৌলস হারানো দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলোর কারুকার্য আজ খসে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে প্রত্নতাত্ত্বিক এ অমূল্য সম্পদের ইতিহাস, ঐহিত্য জানানোর স্বার্থে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবার আগেই যথাযথ উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নবনির্মিত সীমানা প্রাচীরের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তারেক মাহমুদ বলেন, সীমানা প্রাচীরের বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ থাকলে তা সরিয়ে নেয়া হবে।

Share.