পাকুন্দিয়ায় শাহ গরীবুল্লাহর প্রত্নবস্তুর প্রদর্শন

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ শাহ গরীবুল্লাহ (রহঃ)-এর মাজার ঢিবিটি খনন করে পাওয়া প্রত্নবস্তুর প্রদর্শন হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ইতিহাস জানাতে শাহ গরীবুল্লাহর মাজার ঢিবি সংলগ্ন একটি ঈদগাহে এ প্রদর্শনের আয়োজন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়। আজ বৃহস্পতিবার(৭ এপ্রিল) দুপুরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) রতন চন্দ্র পন্ডিত এ প্রদর্শনের উদ্বোধন করেন। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এ প্রদর্শন চলে।

আড়াই মাস ধরে খনন করে মাটির নিচ থেকে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ বছর আগের বিভিন্ন স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ ও তৈজসপত্র পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। পাওয়া নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ইটের তৈরি বর্গাকৃতির একটি প্রতিরক্ষা দেওয়াল, চুন সুরকির মেঝে এবং ব্রিক সলিং। প্রত্ন বস্তুর মধ্যে রয়েছে পোড়া মাটির হাড়ি-পাতিল, ঘটি-বাটি, থালা, পিরিচ, মাটির কলসের ভগ্নাংশ, তৈল প্রদীপ, প্রদীপ দানি, অলংকৃত ইট, ব্রেসলেট, বালা, প্রস্তর খন্ড, জীবাশ্ম, জলাধার, সিরামিক, পোড়ামাটির বল, পুতুল, টয়, ব্যবহারিক তৈজসপত্র সহ ২৫০ টির মতো প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রেনু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহীদ চৌধুরী। এগারসিন্দুর ইশা খান উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ গোলাম ফেরদৌস ও আহমেদ আব্দুল্লাহ, উপ-পরিচালক(প্রশাসন) মোঃ আতাউর রহমান, উপ-পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, এগারসিন্দুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবু, এগারসিন্দুর ইশা খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষ তাজুল ইসলাম ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এনামুল হক রাজীবসহ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, শাহ গরীবুল্লাহর মাজার ঢিবির বিষয়টি মানুষের কাছে অজানা ছিল। ঢিবিটি খনন করে ১০-১১ শতকের বেশকিছু স্থাপত্য এবং স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্যই আজকের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে সহজে এই মাজার এলাকায় আসতে পারে এ জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগারসিন্দুর গ্রামে শাহ গরীবুল্লাহর মাজার ঢিবিটি অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে ঢিবিটির শীর্ষ ভূমির উচ্চতা আট মিটার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু করে। গতকাল বুধবার(৬ এপ্রিল) খনন কাজ শেষ হয়। খনন কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে বলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জানায়। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য ইয়েমেন থেকে এগারজন আওলিয়া এসেছিলেন। এই এগারজন আওলিয়ার নামেই এই গ্রামের নাম হয়েছে এগারসিন্দুর। এই এগারজন সুফি-সাধকের অন্যতম ছিলেন শাহ গরীবুল্লাহ(রহঃ)। এই সাধকের নামই ঢিবিটির নামকরণ করা হয় শাহ গরীবুল্লাহর মাজার।

Share.