স্টাফ রিপোর্টারঃ
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহার বড় জামাত। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। এটি হবে ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাত। সকাল ৯ টায় শুরু হবে ঈদের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
ইতোমধ্যে, ঈদের জামাত আয়োজনের তোড়জোড় চলছে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি, জেলা পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ জামাতকে সফল করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ প্রায় শেষের পথে। সংস্কার করা হয়েছে মুসুল্লিদের অজুখানা এবং টয়লেট। করা হয়েছে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় লোকজনও জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার আয়োজন দেখে খুশি। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে মুসল্লিদের সংকেত দিতে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। ৩টি গুলি করা হবে জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে, ২টি ১০ মিনিট আগে এবং শেষটি জামাত শুরুর ১ মিনিট আগে ছোড়া হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে জামাতের সব আয়োজন। মাঠে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। জামাতের সময় মাঠ ও আশপাশে মোতায়েন থাকবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি মাঠে সাদাপোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও পুরো ঈদগাহ মাঠ থাকছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। ড্রোন ও ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ওয়াচ টাওয়ারগুলো ব্যবহার করবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। মুসুল্লিদের নিয়ে একটি সকাল ৬ ভৈরব থেকে আরেকটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ আসবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক এবং কয়েকটি মেডিক্যাল টিমও। তাছাড়া মুসল্লিদের জন্য খাবার পানি ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। তবে শোলাকিয়া মাঠের ঐতিহ্য ও সুনাম অনুযায়ী এ মাঠের উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, ঐতিহাসিক এই ঈদ জামাতকে যেনো দেওয়া হয় ইউনেস্কো স্বীকৃতি।