মিজানুর রহমানঃ
এখন মনে পড়ে এখন থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সনের ১১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার শিমুলিয়ার ঐতিহাসিক ঘটনা। সাংবাদিক জাতির বিবেক। অন্যায় অত্যচার সহ সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কলম গর্জে উঠে। তাদের কলম সত্য ও ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে জাতীর দৃষ্ঠিলোকে। তবে সকল সাংবাদিকই যে,বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন এ কথা সঠিক নয়।
কিন্তু যারা প্রকৃত সাংবাদিক, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে শত নির্যাতনের মাঝেও থাকেন দৃঢ় ও অঠল , এমনি একজন সত্যব্রতী প্রতিবাদী সাংবাদিক হলেন এম. সাঈদুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন যাবত একান্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত। তিনি দৈনিক সংগ্রাম,ইনকিলাব ও দিনকাল পত্রিকায় পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি হিসাবে শিমুলিয়ার ঐতিহাসিক গঠনা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে পুলিশের রোশানলে পড়েন। তখন পুলিশের নির্মম অত্যাচারে শিমুলিয়া গ্রামের মাটি থর থর করে কাঁপছিল। মানুষের ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ,হত্যা, লুন্ঠন, প্রভৃতির খবর সাংবাদিক এম সাঈদুল ইসলামের কলমে মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছিলো। তার পরিনামে তৎকালীন পুলেরঘাট বাজার থেকে পুলিশ ১৩ ফেব্রুয়ারী/৯০ তারিখে কোন অভিযোগ ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করে তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বুটের নীচে ফেলে ভেঙ্গে দেওয়া হয়, যাতে কোনোদিন আর কলম ধরতে না পারে। শুধু তাই নয়, শিমুলিয়ার ঘঠনায় ৭টি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়ে থাকে জেল হাজতে প্রেরন করে। এরপর থেকে সাংবাদিক সাঈদুল ইসলামের পরিবারে নেমে আসে এক অবর্ণনীয় দুঃখের কালোছায়া। তার স্ত্রী ও সন্তানের রোদনে এবং ক্ষুদার দহনে এমন কোন মানুষ ছিলোনা যার হৃদয় ব্যথিত হয়নি। সংসারে তিনিই ছিলেন একমাএ উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার একটি বইয়ের দোকান ছিল এবং স্থানীয় কালিয়াচাপড়া চিনিকলে স্থায়ী একটি চাকরী করতেন। জেল হাজতে যাওয়ার পরেই বইয়ের দোকানটি বেদখল হয়ে যায় ও চিনিকলের চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। তাঁর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ব্যাহত হয়। তাঁর এক বড় ভাই বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী তাকেঁও বিনাদোষে পুলিশ গ্রেফতার করার চেষ্টা চালায়। ফলে তিনিও ব্যবসা ও সংসার ফেলে নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যাওয়ায়, নির্যাতিত সাংবাদিকের সংসার এমনকি নিজের সংসারেরও ভরন পৌষন করতে পারেনি।
সংবাদিক এম সাঈদুল ইসলাম দীর্ঘ ৬ মাস কারাভোগের পর জমিনে মুক্তি পান। বিগত-০৭/০১/৯২ ইং তারিখ ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন এফআইআর এ সাংবাদিক এম. সাঈদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় মূল ৭টি মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন।
সাংবাদিক জাতির বিবেক। বিচারকদের মতে সত্য ন্যায়ের সূত্র খুজেঁ পরিবেশন করাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সাংবাদিক সাঈদুল ইসলামও তাই করেছিলেন। এটা কি তাঁর অপরাধ ছিলো? এই সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের অপরাধ তাঁর জীবন থেকে কারান্তরালে হারিয়ে গেল স্বর্ণঝরা ছয়টি মাস? কি এমন অপরাধ তিনি করে ছিলেন? কি অন্যায় ছিলো তাঁর স্ত্রী-সন্তানের? কি অন্যায় ছিলো শিমুলিয়ার সহজ সরল নিরাপরাধ গ্রামবাসীর?