কটিয়াদীতে এতিম  দুই শিশুর বোনের বিয়েতে পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা

0
মিজানুর রহমানঃ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী  গ্রামের  রবিদাস পরিবারকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে  বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন চার কর্মকর্তা অসহায় রবিদাস পরিবারের এতিম মেয়েটির বিয়ের জন্য কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ  এর মাধ্যমে নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
আর্থিক অনুদান প্রদানকারী পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাগণ হচ্ছেন ডিআইজি অলিউর রহমান,  ডিআইজি টি আই চৌধুরী , পুলিশ সুপার এম এন  ভক্ত ও  পুলিশ সুপার মো.  সারোয়ার আলম।
অনুদান প্রদান উপলক্ষে  লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক ওবায়দুল্লাহ আকন্দ ভুবনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার  মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ। বিশেষ অতিথি  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  (অপরাধ) মোহাম্মদ নূরে আলম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার মারুয়া, লোহাজুরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম বিএসসি, কটিয়াদী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও যুগান্তর প্রতিনিধি অধ্যক্ষ ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সাংবাদিক মোবারক হোসেন, যুবলীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, ইউপি সদস্য মো. আবদুল খালেক প্রমুখ। আলোচনা শেষে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ এতিম অসহায় দুই শিশুর মা বিধবা আরতী রানী রবিদাস ও তাদের শিশুপুত্র সঞ্জয় রবিদাসের  হাতে নগদ এক লক্ষ দশ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ ছাড়াও  কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম  কালেক্টরেট ভবনের  নিজ কার্যালয়ে ডেকে এনে ওই দুই শিশুর মা আরতি রাণী রবিদাসের হাতে নিজ তহবিল থেকে তুলে দিলেন ২০ হাজার টাকার চেক। একই সময় ঘোষণা দিলেন ওই দুই শিশুর লেখাপড়া নিশ্চিতের। আর তাদের লেখাপড়ার নিয়মিত দেখভালের দায়িত্ব দিলেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পালকে। ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার আনন্দ ও সঞ্জয় রবিদাসের বড়বোন নীপা রানী দাসের বিয়ে।
জানা গেছে, প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দুই বছর আগে ওই দুই শিশুর পিতা লোহাজুড়ি গ্রামের নরেশ চন্দ্র রবিদাস পরলোক গমন করেন। মৃত্যুর সময় নরেশ চন্দ্র রবিদাস অবিবাহিত মেয়ে নীপা রাণী রবিদাস (১৯), সীমা রাণী রবি দাস (১২) এবং  আনন্দ রবিদাস (১৩) ও সঞ্জয় রবিদাস (৮) নামের ওই দুই শিশুপুত্র রেখে যান।
সম্প্রতি নীপা রাণী রবিদাসের বিয়ে ঠিক হয় একই সম্প্রদায়ের এক ছেলের সঙ্গে। কিন্তু রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের যৌতুক, বরযাত্রীদের আপ্যায়নসহ বিবাহ অনুষ্ঠানের খরচ নির্বাহে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন অভিভাবকহীন পরিবারটি।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আনন্দ রবিদাস মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে গ্রামের বাজারের এক সেলুনে চুল কাটার কাজ এবং চর কাওনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সঞ্চয় জুতা সেলাই ও পালিশের কাজ বেছে নেয়। আর  মা আরতি রানী দাস (৩৯) লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় মাটি কাটার কাজ শুরু করেছিলেন।
মা আরতি রাণী রবিদাস মেয়ের বিয়ের জন্য  সহযোগিতা এবং ছোট্ট দুই শিশু পুত্রের লেখাপড়ার এমন নিশ্চয়তা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসক , পুলিশের বড় কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর  সহযোগিতায়  স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। ছোট সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারছেন নতুন করে।
Share.