স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। সকল অভিযোগ নিয়ে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হাজির হয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা। শিল্পকলার সামনে বিক্ষোভের মাধ্যমে দাবি জানান কালচারাল অফিসারের পদত্যাগের। তখন পর্যন্তও কার্যালয়ে হাজির হোননি কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষনা দেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
এসময় তারা তিনটি দাবি তোলে ধরে প্রথম দাবিতে তারা বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রেজিমের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী, আওয়ামী লীগকে অনৈতিক সুবিধাদানকারী, আমলাতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন শিল্পকলা বিমুখ জেলা কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুরকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী তথা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সকল দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে। কৃত অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, ২০ বছরের পুরোনো অচল অপূর্ণ অশিল্পীদের নিয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করে অন্তর্বতী কমিটিতে শিল্পীদের মধ্য থেকে একজনকে রাখতে হবে। তৃতীয় দাবি, শিল্পকলা একাডেমীতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত থাকা সকল সদস্যদের সদস্য পদ বাতিল করে প্রকৃত শিল্পীদের সদস্য করতে হবে।
অভিযোগ এনে সাংস্কৃতিক কর্মীরা ইফতেখার হোসেন শাকিব বলেন, কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের যোগদানের পর থেকে শিল্পকলায় শিল্পীদের আনাগোনা কমে গিয়েছে। শিল্পকলার বারান্দায় আগে শিল্পীরা রিহার্সাল করতে পারতেন, এখন পারেন না। কারণ বারান্দার জন্য আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়। প্রোগ্রামের জন্য ১৫দিন আগে হল বুকিং দেওয়ার পরও প্রোগ্রামের কয়েক ঘন্টা আগে প্রোগ্রাম বাতিল করে দেন। স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার এজেন্ট বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকতেন এই কর্মকর্তা। আমাদের একটা প্রোগ্রাম আয়োজনে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। আর সেই প্রোগ্রাম বাতিল করে দেন তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। সেখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রোগ্রাম করা হতো। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রাম করা হয়েছে। শিল্পকলার একটা ফি জমা দিয়ে প্রোগ্রাম করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামের কোন ফি নেওয়া হতো না। কোন রিসিট দেওয়া হতো না।
সাংস্কৃতিক কর্মী আন্তা রহমান রোজ বলেন, আমরা কোন সংস্কৃতি বিমুখ, শিল্প বিমুখ, পা-চাঠিয়া ধরণ এবং কুরুচি সম্পূর্ণ ব্যক্তিকে সংস্কৃতি অঙ্গনে চাচ্ছি না। তানিয়া ইসলাম ঝুমুর এ ধরনের প্রকৃতির মানুষ। যার কারণে শুধু কিশোরগঞ্জ নয় পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতির জগতে তার অবস্থান চাচ্ছি না। আমাদের অসংখ্য প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন তিনি।
আর ডি এস-এর ডিরেক্টর, সাংস্কৃতিক কর্মী আদনান আবিদের ভাষ্যমতে, তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের সাথে একটা মিটিংয়ে শিল্পকলা কিভাবে চালানো যায় সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেছিলেন, শিল্পকলা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে সরকারের কাজ গুলো আগে করা হবে। তারপর অন্যরা। বিষয়টাকে তিনি এভাবেও উপস্থাপন করেছেন যে, আগে পরিবারের মানুষ খাবে পরে বাহিরের মানুষ খাবে। সে সবসময় ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। কিশোরগঞ্জের শিল্পী সমাজ বিষয়গুলো খুব ভালো করেই জানেন। আর এই জন্যই আজকে এখানে এসেছি। তানিয়া ইসলাম ঝুমুরকে এখান থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়েও সারা পাওয়া যায়নি।
মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংস্কৃতিকর্মীদের বিক্ষোভ ও অভিযোগের বিষয়ে জানা নেই। জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানানো হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।