স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫০ নেতা পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে জেলা শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষনা দেন নেতারা।
পদত্যাগ কারী নেতারা হলেন, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জেবা আফতাবুন কারিকা, রায়হান জোহান, আরিফুজ্জামান আলভী, হুজাইফা ইভান, আকিব হোসেন, সাইফ আব্দুল্লাহ মানার, নাঈম হক, তানজীব তকি, যুগ্ম সদস্য সচিব নীলিমা আক্তার প্রমি, তাবাসসুম কাওসার প্রিয়ন্তী, নওশাদ নাঈম, মোঃ শামীম মিয়া, মশিউর রহমান, সুমাইয়া শাওন, নুরজাহান রহমান পপি, আদিব আহসান সাদাব, সংগঠক শারমিন আক্তার মিতু, ফাইজা তাবাসুম, লাবনী আক্তার, ইসরাত খান অর্পিতা, স্বাস্থ্য সেল সদস্য নাহিন, মীর্জা মোফাজ্জল, মোয়াইমিন খান তানিম, সদস্য সালেহীন অভি, ইরফান আহমেদ রাব্বী, মইনুল ইসলাম চাঁদ, সাইদ আব্দুল্লাহ মোয়াজ, আজিজুল হাকিম জনি, সাইফুল্লাহ তারিফ, শেখ মোহাম্মদ আলভি, অনিক আহম্মেদ, নাঈমুল ইসলাম আকাশ, সিয়াম আহমেদ, নাহিস হাসান জয়, অনিক রায়হান, মহিদুর রহমান তপু, আবির হোসেন, আলিফ, আশরাফুল ইসলাম শান্ত, নৌশাদ জোসান, মাহফুজা আক্তার, মোঃ সা্ব্বির, রকি, সানি, মোঃ মোস্তাকিম, নাঈমুল হাসান রাকিব।
লিখিত বক্তব্যে পদত্যাগ করা যুগ্ম আহ্বায়ক আলী রায়হান জোহান বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকেই জেলা কমিটির দায়িত্বশীলদের মাঝে স্পষ্টত হয়ে উঠে দায়িত্বহীনতা ভাব থেকে শুরু করে নানান বিধ অন্যায় দুর্নীতির অভিযোগ। জেলা কমিটির পদাধিকার বা লিয়াজু করার বলে কয়েকজন অবর্তীন হয় স্বৈরাচারী ভূমিকায়। যে বা যারাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাকেই করা হতো বহিষ্কার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ এপ্রিল জেলা সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্সের বিরুদ্ধে বৃক্ষরোপনের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন অফিসে দরখাস্ত করা এবং অন্যান্য অনিয়ম ও অসাংবিধানিক কার্য্যকলাপ নিয়ে কথা বলতে যাওয়া হলে এর বিরুদ্ধে সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স ও আহ্বায়ক মোঃ ইকরাম হোসেন এর কোন রেসপন্স আমরা পাইনি। এর আগেও বীজ গোদামে কেলেঙ্কারিতে ২ জনের নাম ছিল, বাজারের ইজারেতে (নীলগঞ্জ বাজার) আহ্বায়ক ইকরাম হোসেনের নাম আছে। যা পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বারা তদন্তের কথা ছিল। কিন্তু এই তদন্ত এবং অভিযোগ কে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই গত ৩ মে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে অন্যায় এবং মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া ও সংগঠক রিয়াদ আহমেদ উল্লাসকে বহিষ্কার করা হয়। যা স্পষ্টভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নৈতিকতা বিরোধী এবং আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের একক আধিপত্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অন্যায় দুর্নীতি এবং সেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জেলা কমিটির অন্তত ৫০ জন নেতা পদত্যাগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে মোঃ ইকরাম হোসনকে আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করে ৩২১ জনের কমিটি করা হয়। আমরা নতুন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। যারা দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে কোন ভূমিকা না থাকা সত্বেও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব পদ ভাগিয়ে নিয়েছে। সদস্য সচিবকে প্রমাণ দিতে হবে যে, আন্দোলনে তার ভূমিকা কি ছিল। সে অবিপ্লবী একজন মানুষ।
বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া বলেন, আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্সের কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতি আমাদের কাছে ধরা পড়েছিল। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। দুর্নীতি ঢাকতে তারা আমাকে ও রিয়াদ আহমেদ উল্লাসকে বহিষ্কার করেছে। এইটা অসাংবিধানিক কাজ। যেই অডিও ভাইরালের প্রেক্ষিতে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে আমার কোন ভয়েস ছিলো না। তারা কোন তদন্ত না করেই বহিষ্কার করেছে।
জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি যদি আন্দোলনে না থাকতাম তাহলে গত ৯ মাস আমার সাথে কিভাবে ছিল। তাদের এই পজিশন তো আমার কারণেই আসছে। আমি অনৈতিক কাজ করতে দেয়নি বলে এখন আমি ভালো না। পদত্যাগের বিষয়ে অনেকেই জানেই না তারা পদত্যাগ করেছে। কমিটিতে নাম আছে এমন ৫-৭ জনের পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। যারা পদত্যাগ করেছে তাদের নাম থাকলেও কোনদিন কোন প্রোগ্রামে পাইনি। বহিষ্কৃত মামুন মিয়া ও উল্লাসের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রমাণ আছে তার প্রেক্ষিতেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মোঃ ইকরাম হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমার কাছে ৩-৪ জনের পদত্যাগ পত্র আসছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তাদের মধ্যে ৩-৪ জন আমাদের কমিটিতে আছে। বহিষ্কৃত মামুন মিয়া বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। এসব প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাজার ইজারা নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, নীলগঞ্জ বাজারটি আগে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে নিতো। আর এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা জিম্মি থাকতো। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা, চাঁদা আদায় করতো। আমার বাড়িটা যেহেতু বাজারের কাছে তাই এইবার বাজারের ৩৮ জন ব্যবসায়ী ও নাগরিক কমিটির স্থানীয় নেতারা বাজার ইজারা নেওয়ার পর যেন কোন সমস্যা না হয় সাপোর্টের জন্য জোর করে তারা আমার নামটা রেখে দিয়েছে। আমার সেখানে কোন ইনভেস্ট নাই। ব্যবসায়ীরা ইনভেস্ট করেছে।