স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার জনসাইর হাওরের ‘ডাকাত মানিক বাহিনী‘র অত্যাচার বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার জিরাতি কৃষকেরা। শনিবার (১ জুন) বেলা ১১ টায় সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের কাঠালিয়া ঈদগাহ এলাকার কিশোরগঞ্জ–মরিচখালি সড়কে জড়ো হয়ে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
‘জনসাইর হাওরের কৃষকবৃন্দ‘র ব্যানারে আয়োজিত ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ ও কটিয়াদী উপজেলার পাঁচ শতাধিক জিরাতি কৃষক এসে অংশ নেন।
মানববন্ধনে কৃষকেরা জানান, অষ্টগ্রাম উপজেলার জনসাইর হাওরের সামাইল বিল পারে কিশোরগঞ্জ সদর করিমগঞ্জ ও কটিয়াদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক অস্থায়ী ‘জিরাতি ঘর‘ বানিয়ে কৃষি কাজ করে থাকেন। কিন্তু কৃষকেরা কষ্টের ফসল ‘ডাকাত মানিক বাহিনী‘র কারণে বাড়িতে আনতে পারেন না। হাওরে ৬ মাস জিরাত করার সময় সেখানে কৃষকদের গরু বাছুর নিয়ে থাকতে হয়। এসবও লুট করে নিয়ে যায় ওই বাহিনীর সদস্যরা। কৃষকেরা প্রতিবাদ করতে চাইলে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন।
জিরাতি কৃষকেরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর হাওরে ডাকাত মানিক বাহিনীর এ অত্যাচার তাদের সহ্য করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব।
মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন কৃষক কেঁদে ফেলেন। এদের একজন করিমগঞ্জ উপজেলার নানশ্রী গ্রামের মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এবছর বৈশাখে ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য চারটি বড় ষাঁড় গরু ব্যাপারীর কাছে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে টাকাগুলো জিরাতি ঘরের বাক্সে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলাম। গরু বিক্রির খবর পেয়ে মানিক বাহিনী ডাকাতি করে টাকাগুলো নিয়ে যায়। এ সময় মানিক বাহিনী রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কৃষক কিতাব আলি আজিজুল হক, মাসুদ মিয়া, আব্দুস সালাম নুরুল্লাহ ও পিয়াসকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।‘ এ বছর ডাকাত মানিক বাহিনী কৃষকদের অন্তত ২০টি ঘরে হামলা চালিয়ে কৃষকদের টাকা পয়সা, গরু বাছুর ও জমির ফসল লুট করে নিয়ে যায় বলে মানববন্ধন থেকে জানা গেছে।
কৃষকেরা জানান,ডাকাত মানিক বাহিনীর প্রধানের নাম মানিক মিয়া (৪৮)। তিনি নিকলী উপজেলার টেঙ্গুরিয়া গ্রামের লবু মিয়ার ছেলে। তাদের মূল বাড়ি অষ্টগ্রামে। শুকনো মৌসুমে সেখানে থেকেই তিনি তার বাহিনী পরিচালনা করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, মানিক বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার কৃষক রিয়াজুল ইসলাম, মাহতাব উদ্দিন, নুরুল ইসলাম মেম্বার, রেনু মিয়া, গোলাপ সরকার।
কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম শওকত কবির খোকন, যুবলীগ নেতা মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুল প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে কৃষকেরা কিশোরগঞ্জ–মরিচকালি সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন।