আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার বিবাদী পক্ষের বাধার মুখে বাদী পক্ষের পরিবার দেড় মাস ধরে নিজেদের ভিটায় ফিরতে পারছে না বলে অভিযোগ। এ অবস্থায় তাদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের আশ্রয়ে। আরও অভিযোগ, ভুক্তভোগীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরণা দিলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। ঘটনাটি উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরপাড়াতলা গ্রামের।
পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীটি সন্ধ্যায় তার নিজ ঘরে বসে পড়াশোনা করছিল। এমন সময় একই বাড়ির আবদুছ ছালামের ছেলে মো.আমিন মিয়া গত বছরের ১৯ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ছাত্রীটির ঘরের ভেতরে ঢুকে। পরে দরজা বন্ধ করে ছুরি বের করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তের পক্ষের লোকেরা বিষয়টি নিয়ে মামলা না করতে মেয়েটির পরিবারকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। ঘটনার তিন দিন পর স্থানীয় মেম্বার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রভাবশালীদের নিয়ে সালিশ বসিয়ে এক লাখ টাকায় আপোষ-মীমাংসা করা হয়। এক সপ্তাহ পর মেয়ের বাবা কফিল উদ্দিনের নামে এক বিঘা জমি ইজারা রেখে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মেয়ের পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে অভিযুক্তরা। বাড়ির উঠানের মাঝ বরাবর টিনের বেড়া দিয়ে মেয়ের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এছাড়াও ইজারা জমিতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে গত বছরের ১৪জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন। মামলায় মো.আমিন মিয়া ও তার বড় ভাই মো.আবদুছ ছামাদকে আসামি করা হয়। এ কারণে বিবাদী পক্ষের লোকজন বাদী পক্ষের লোকজনকে ভয়ভীতিসহ নানারকম হুমকি দিচ্ছিল। মামলাটি মিমাংসার জন্য স্থানীয় মেম্বার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ফের কয়েক দফা সালিশ বৈঠক হয়। একপর্যায়ে কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি গত বছরের ১০সেপ্টেম্বর মিমাংসা করা হয়। মিমাংসার পর ফের মেয়ে পক্ষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে গত ২৩ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে অভিযুক্ত আমিন মিয়া ও তার বড় ভাই আবদুছ সামাদের নেতৃত্বে ৫০-৬০জনের একটি সন্ত্রাসীদল রামদা, বল্লম, লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে মেয়ের পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এতে বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা মেয়ের কাকা ইকবাল হোসেন ও তার দাদী বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুনকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাদের ডাকচিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করে। ইকবাল ও সুফিয়া খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ৬জনকে আসামি করে গত ২৮ফেব্রুয়ারি পাকুন্দিয়ায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো সহযোগিতা করছে না পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় মেয়ে পক্ষকে তাদের নিজ বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা বিবাদীপক্ষ।
মেয়ের চাচা ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযুক্তরা আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ আমাদের মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও হুমকি দিচ্ছে আমরা বাড়িতে গেলে জীবনে মারিয়া ফেলবে। তাই আমরা দেড় মাস ধরে বাড়িতে যেতে পারছি না। এবিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে বিবাদী পক্ষের আবদুছ সামাদকে জিজ্ঞেস করলে বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, বাড়িতে আসতে আমরা তাদের নিষেধ করিনি। এরপরও কেন তারা বাড়িতে আসছেনা এটি তাদের বিষয়।
পাকুন্দিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করেছি। কিন্তু কোনো স্বাক্ষী পাওয়া যায়নি। বাদীর পক্ষে কেউ মুখ খুলেনি। তাই অভিযোগটি রেকর্ড করা যায়নি।