স্টাফ রিপোর্টারঃ
ধোপার পুত লিটন, তুই বেডা হিন্দু, তুই এই সাহস পাছ কই এই দেশে। পিটাইতে পিটাইতে তক্তা বানাইয়া দেশ ছাড়া করে দিব, ইনশাআল্লাহ। তোর কি আছে এই দেশে? একটা ধোপার পুত। এই ভাবেই প্রকাশ্যে লিটন নামে একজন লন্ড্রী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে হুমকি দিচ্ছেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাঈদ আহমেদ। বক্তব্যের সেই ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলে হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, গত ১২ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের অষ্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে ১০ আগষ্ট উপজেলা বিএনপি অষ্টগ্রাম অডিটোরিয়ামে প্রস্তুতি সভা করে। সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একদিন আমাকে বলেছিল সাইদ ভাই, যদি সময় পরিবর্তন হয় ধোপার পুতের হাত কাইটালামু আমি। আজকে সময় এসেছে, আমি দেখতে চাই সদরের চেয়ারম্যান এই ধোপার পুত লিটনকে কি করে।
বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নাই। খাওয়ার অভাব নাই। অষ্টগ্রামেও খাওয়ার অভাব নাই। যার যা খুশি, যা চাইবেন, ফজলুর রহমান তাই আপনাদেরকে দিতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। চিন্তা কইরেন না। ঠেলাঠেলি, মারামারি, ভাগাভাগি, ঘুষাঘুষি, কারে ধইরে কারে খাইবো এরকম চিন্তা কইরেন না শিন্নির লাগি। শিন্নির অভাব নাই। কত খাইবেন? এখন দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব যদি ঠিকমতো পালন না করেন হালুয়া রুটি খাইতে পারবেন না ভালো করে। তখন কিন্তু আমাদের দোষ দিবেন না।
বক্তব্যের বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাঈদ আহমেদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে লিটনকে না চেনার ভান করে ফোন রেখে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লন্ড্রী ব্যবসায়ী ও কাস্তল ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন শুক্ল দাস বলেন, আমি একজন লন্ড্রী ব্যবসায়ী সকলেই আমার কাস্টমার। পাশাপাশি তিনবারের ইউপি সদস্য। আমার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্পর্ক রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাঝে মাঝে আমার দোকানে এসে বসে থাকতেন। সেই কারণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে সবকিছু নিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে বর্তমানে আমি এলাকা ছাড়া। জীবনের কোন নিরাপত্তা পাচ্ছি না। পুলিশকে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। দুইটি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি হিন্দু মানুষ আমার ঘর বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। আবার মামলায় বিএনপি’র অফিস ভাঙচুরের আসামি করা হয়েছে আমাকে।
উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুল বলেন, প্রোগ্রামে আমি ছিলাম। আমি বিষয়টা ওইভাবে শুনি নাই। আমরা ঢালাও ভাবে দোষারোপ করেছি যারা বিগত ১৫বছর আমাদের ক্ষতি সাধন করেছে। আমাদের নির্যাতন করেছে তাদের ব্যপারে। আর লিটনও তাদের মধ্যে একজন। তার দোকানটা আওয়ামী লীগের সভাপতির অফিস ছিল। যেখানে বসে সভাপতি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন। বাহিনীর আস্তানা সেখানে ছিল। আর সেই হিসেবে লিটনের উপর আমরা ক্ষুব্ধ ছিলাম। কিন্তু ওইদিন প্রোগ্রামে এইভাবে কথা বলেছে কিনা আমি শুনি নাই। হয়তো খেয়াল করি নাই।
অষ্টগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, লিটন শুক্ল দাসের এলাকা ছাড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সে আমাদের কাছে লিখিতভাবে কোন অভিযোগ দেয়নি। কিছু বলেওনি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিএনপি কখনও এমন বক্তব্য সমর্থন করে না। এবং হুমকি দিয়ে এধরনের কোন কিছু বললে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।