আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নরসুন্দা নদী পাড়ের শতাধিক পরিবার ভাংগনের কবলে পড়ে গত চার বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অপরিকল্পিত ও দায়সারা ভাবে নদীটি খননের কারণে নদী পাড়ের অর্ধশত পরিবারের বাড়ি-ঘর, টিউবওয়েল, গাছপালাসহ বাড়ির উঠান ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। হেলে পড়েছে আরও অর্ধশত পরিবারের কাঁচা-আধাপাকা ঘরসহ গাছপালা ও বাঁশঝাড়। এতে এলাকার মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। দ্রুত এ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
জানা যায়, নদীটি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পাকুন্দিয়া ও কিশোরগঞ্জ শহরের বুকচিরে নীলগঞ্জ হয়ে ইটনা উপজেলার ধনু নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। মৃতপ্রায় এ নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ‘নরসুন্দা নদী পুনঃখনন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা সংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে হোসেনপুর উপজেলা থেকে পাকুন্দিয়া উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা হয়ে নীলগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হয়। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ যৌথ ভাবে বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা। ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কিন্তু নদী খননের এক বছর যেতে না যেতেই নদী পাড়ের অর্ধশত বাড়িঘর ভেঙে মাটি ধসে নদী গর্ভে চলে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেটিইনিং ওয়াল (নদী পাড় বাঁধা) বা পাইলিং না করে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নদীর দক্ষিণ পাড়ে অপরিকল্পিত ও দায়সারা ভাবে পাড়ে বালু রাখায় বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টির পানির স্রােতে বালুসহ অর্ধশত বাড়ি-ঘর নদীর তলায় চলে গেছে।
নদীর দক্ষিণ পাড়ের বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত আসাদ মিয়া বলেন, তিন বছর আগে আট লাখ টাকা খরচ করে একটি আধাপাকা ঘর ও ২৫ হাজার টাকা খরচ করে একটি টিউবওয়েল বাড়িতে নির্মাণ করেছিলাম। এ বছরের বর্ষায় নদীর পাড় ভেঙে ঘর ও টিউবওয়েল ভেঙে সম্পূর্ণ হেলে পড়েছে। ঘর ও টিউবওয়েল রক্ষায় ৪০০ বস্তা টিনের সুরকি ও বালির বস্তা ফেলেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। নদী খননের আগে এ ভাঙন ছিল না। খারা ভাবে নদীর পাড় খনন করায় এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কাজল মিয়া বলেন, আমার ঘরের পেছনের মাটি সরে গেছে। ভিতরে মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরটি রক্ষায় নদীর পাড়ে ২০০ বস্তা বালি ফেলেছি। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই আতংকে আছি। কখন ঘরটি নদী গর্ভে চলে যায়।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইয়াছিন খান বলেন, গত বছর আমি তৎকালীন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসানের সঙ্গে গ্রামটি পরিদর্শন করেছি। কিন্তু এটি আমাদের কাইটেরিয়ায় পড়ে না, কারণ নদীর পানি প্রবাহের কারণে যদি নদী পাড়ে ভাঙন দেখা দেয় তাহলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু এই গ্রামটি ওই কাইটেরিয়ায় পড়ে না। কারণ নরসুন্দা নদী খনন করা হলেও নদীতে ওই রকম পানি নেই। কোন স্রােত নেই, প্রবাহ নেই। শুধু বর্ষাকালের প্রবল বৃষ্টির পানি নদীর ঢালে পড়ায় ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এটি উপজেলা প্রশাসন ইচ্ছে করলেই তাদের সহযোগিতা করতে পারে।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।