মিজানুর রহমানঃ
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতি বুধবারই বসছে জেলার অন্যতম গরুর হাট। মাঠে একটুও ফাঁকা জায়গা নেই। খুঁটিতে বাঁধা শত শত গরু। এমনকি চলার রাস্তা ও তার আশপাশে এলোপাথাড়িভাবে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা হচ্ছে গরু-ছাগল। রয়েছে হাজারো মানুষের কোলাহল।
হাটের কারণে প্রতি বুধবারই স্কুলটি নামেমাত্র খোলা থাকে। আর এদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক কম থাকে। স্কুলে ক্লাসের পরিবেশ নেই বললেই চলে এদিন। চারদিকে এতো হাকডাকের ভিতর স্কুলে ক্লাস চলে। তবে ক্লাসের প্রতি মনোযোগ নেই ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের।
২০০৯ সালে উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের সাজনপুর গোপীরায়ের বাজারের কাছে এ মাঠটিকে ঘিরেই গরুর হাট গড়ে ওঠে। গত ১৪ বছরে জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাটে পরিণত হয়েছে এটি। ইদানিং স্কুল মাঠে নামে মাত্র কাপড়ের পর্দা দিয়ে চলছে গরুর হাট। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। শিক্ষার সুষ্ঠু ও নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত কারোই পদক্ষেপ নেই। এদিকে সংবাদ মাধ্যমে নিউজের পর নিউজ ছাপা হচ্ছে এ নিয়ে তোয়াক্কা করার সময় কারো নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা রসাতলে যাক তাতে কি বাণিজ্যতো হচ্ছে সবার। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করনে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ জেনেও না জানার ভাণ ধরে আছে বছরের পর বছর। কোনো এক অদৃশ্য লাভে কেউ কথা বলছে না শিক্ষার পক্ষে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত অদৃশ্য শক্তি ও লাভবান হয়ে মুখ খুলছে না এমনকি ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের চারপাশেই গরু আর গরু। এমনকি স্কুলের বারান্দায় দাড়িয়ে কেউ কেউ সিগারেট টানছেন মনের সুখে। স্কুলের মূল গেট দখল করে শত শত গরু বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা। স্বাভাবিকভাবেই হাটা যায় না যেখানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা গেইট দিয়ে বের হবে কিভাবে। বুধবার আসলেই স্কুল ফাঁকি দেওয়ার হিড়িক পরে যায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমনকি ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্থানীয়দের ধান শুকানোর কাজে মাঠ দখল করতেও দেখা গেছে। একসময় এ স্কুল থেকে বৃত্তি পাওয়া সহ শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী বের হতো। গরুর হাট চালু হওয়ার পর মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ স্কুলে ভর্তি করতে অভিভাবকরা অনীহা প্রকাশ করছেন।
গরুর হাটটি যেনো অতি দ্রুত স্কুল গেইট ও মাঠ থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে ক্লাসের নিরব পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় এমনটাই দাবি শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের।