আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
জমি থেকে তোলা হচ্ছে কাঁচা টমেটো। তারপর সেই টমেটোয় স্প্রে করা হচ্ছে ইথিফন গ্রুপের এক ধরনের কেমিক্যাল। এতে সবুজ টমেটো হয়ে উঠছে লাল টুকটুকে। জমি থেকে কাঁচা তোলা হলেও সে টমেটো আর কাঁচা থাকেনা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরে এখনো এভাবেই কাঁচা টমেটো পাকানো হচ্ছে। আর পাকা হিসেবেই বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এসব টমেটো। গত ৮-১০বছর ধরে শীত মৌসুমে একই জায়াগায় শতাধিক কৃষক টমেটোতে ক্ষতিকর ইথিফন মিশিয়ে বাজারজাত করলেও এখন পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে মাঠে দেখা যায়নি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পাকুন্দিয়া উপজেলায় টমেটো চাষ হয়েছে ৫৫হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে আনুমানিক ৩০মেট্রিকটন করে টমেটো পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে এবার টমেটো উৎপাদন হবে প্রায় ১১০০মেট্রিক টন।
গত মঙলবার দুপুরে পাকুন্দিয়া মির্জাপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেতেই থোকায় থোকায় টমেটো ঝুলে আছে। এসব ক্ষেতের পাশেই কোনটিতে ইথিফন মেশানো টমেটো স্তুপ করে খড় ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আবার কোন ক্ষেতের পাশে টমেটোকে রোদে শুকানো হচ্ছে। এসময় কথা হয় কাহেৎধান্দুল গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদের সঙ্গে। তিনি জানান, এবছর তিনি প্রায় তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে এনে মেশিনের সাহায্যে ওষুধ স্প্রে করা হয় টমেটোতে। এরপর একদিন রোদে শুকিয়ে স্তুপ করে খড় ও পলিথিন দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়। এভাবে ২-৩দিন ঢেকে রাখার পর আবার সেগুলো রোদে শুকানো হয়। এরপর আবার একদিন ঢেকে রাখার পরদিনই লাল হয়ে যায় টমেটো। তিনি জানান, কাঁচা টমেটোর দাম মণ প্রতি ৩০০-৪০০টাকা হারে কম থাকে। তাই তারা বেশি মুনাফা লাভের আশায় ওষুধ দিয়ে পাকিয়ে সেগুলো বাজারে বিক্রি করছেন। পাকা টমেটো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০টাকা মণ দরে। আর কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০টাকা মণ দরে।
পাকুন্দিয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, প্রায় ৮-১০বছর ধরে মির্জাপুরের চরে ক্ষতিকর ওষুধ দিয়ে কাঁচা টমেটো পাকানো হচ্ছে। আর এসব টমেটো কৃষকেরা উপজেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করছে। পাইকারি বাজার থেকে আমরা কিনে এনে খুচরা দরে বিক্রি করছি। ক্ষেত থেকে পাকা টমেটো ওঠা না পর্যন্ত এসব টমেটোই বাজারে বিক্রি হবে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা.শারমিন শাহনাজ বলেন, কেমিক্যাল মানেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। ইথিফন একটি কেমিক্যাল। ইথিফন দিয়ে পাকানো টমেটো খেলে মানুষের পেটের পীড়া, পাকস্থলির সমস্যা, হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কেমিক্যাল দিয়ে কাঁচা টমেটা পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করাটাই একটা মারাত্মক প্রতারণা।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এবিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। পাওয়া গেলে যারা এ কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।