পাকুন্দিয়ায় ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
প্রাচীনকাল থেকেই বছরের শেষে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের আঞ্চলিক খেলা-ধূলা ও প্রতিযোগীতার আয়োজন হয়ে আসছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকটা হারিয়েই যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক খেলা-ধূলা ও প্রতিযোগীতা। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলা গরুর হাল দৌড় প্রতিযোগীতা।

বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) উপজেলার কুমারপুর গ্রামে একটি খোলা মাঠে এ হাল দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। এ হাল দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করে যৌথভাবে মঙ্গলবাড়ীয়া ও কুমারপুর গ্রামের যুবসমাজ। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই মাঠে হাল দৌড় প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। এ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা রঙ ও আকারের হালের গরু নিয়ে মাঠে আসেন প্রতিযোগীরা। হাল দৌড় প্রতিযোগীতাটি ব্যতিক্রমধর্মী হওয়ায় তা দেখতে হাজারো নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় হাল দৌড় খেলা।

এ প্রতিযোগীতার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি জোড়া হালের গরুর কাঁেধর জোয়ালে দড়ি দিয়ে পেছনে একটি মই বেঁধে নিতে হয়। পেছনের ওই মইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে একজন কৃষক গরু জোড়াকে গন্তব্যের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যান। যে গরু জোড়াটি সবচেয়ে কম সময়ে নির্ধারিত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারবে-ওই জোড়াটিই হবে প্রতিযোগীতার সেরা। আর জিতে নিবে বিজয়ের পুরস্কার। এ প্রতিযোগীতায় অংশ নেয় ১০ জোড়া হালের গরু।

প্রতিযোগীতায় মাত্র ২৬ সেকেন্ডে সাড়ে ৩০০ গজ পথ পাড়ি দিয়ে দৌড় প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হয় উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের হালের গরু। ২৮ সেকেন্ডে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দ্বিতীয় হয় উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলামের হালের গরু। ৩১ সেকেন্ডে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে তৃতীয় হয় উপজেলার কন্দরপদি গ্রামের রফিকুল ইসলামের হালের গরু। প্রতিযোগীতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারী বিজয়ীদের প্রত্যেককে একটি করে ছাগল পুরস্কার দেওয়া হয়। অন্য প্রতিযোগীদের স্বান্তনা পুরস্কার হিসেবে একটি করে ছাতা উপহার দেওয়া হয়।
মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামের গোলাপ মিয়া বলেন, কয়েক হাজার নারী পুরুষের উপস্থিতিতে হাল দৌড় প্রতিযোগীতাটি দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ, প্রতি বছরই যেন এ খেলাটির আয়োজন অব্যাহত থাকে।

কুমারপুর গ্রামের রুবেল মিয়া বলেন, হারিয়ে যেতে বসা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাল দৌড় প্রতিযোগীতাটির আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ খেলাটি বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আয়োজকদের পক্ষে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের জয়নাল ও কুমারপুর গ্রামের বজলুর রহমান বলেন, হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমরা এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছি। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতি বছরই এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করতে চেষ্টা করব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহির রায়হান শিহাব বলেন, আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা এ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরই যাতে এ হাল দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করা যায়, আমার পক্ষ থেকেও তাদের আমি সার্বিক সহযোগীতা করব।

Share.