উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ উপজেলায় গত বছর ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। এ বছর ৫৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া সরিষায় রোগ বালাই ও ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম। ফলে সরিষার আবাদে তাদের আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকায় দৃষ্টি জুড়ে শুধুই হলুদের সমারোহ। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজের মাঝে যেন কেউ হলুদের আল্পনা এঁকেছে। এই হলুদের রাজ্যে মধু আহরণে ব্যাস্ত মৌমাছিরা।
জানা গেছে, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম পাওয়ায় এবং উৎপাদনে সময় বেশি লাগায় কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকটা কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৭, বারি-১৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এসব জাতের সরিষা মাত্র ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় এক দশমিক পাঁচ টন। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
এবছর চার বিঘা জমিতে বারি-১৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আশা করছি, এবার বাম্পার ফলন হবে।
কুশাকান্দা গ্রামের কৃষক গোলাপ মিয়া তিনিও দুই বিঘা জমিতে বারি-১৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষার দাম অনেক বেশি। তাছাড়া এজাতের সরিষার ফলন অনেক ভালো। এ জাতের সরিষা কেটে ওই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা যায়। এজন্য আমি এজাতের সরিষা চাষ করেছি। আগামীতেও আবার সরিষা চাষ করব।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর ই আলম বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষককে বারি-১৭ ও বারি-১৪ জাতের সরিষা বীজসহ সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সয়াবিনের আমদানি শতকরা ৪০ ভাগ কমাতে সরকার একটি মহা পরিকল্পনা নিয়েছে। সে অনুযায়ী কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।