আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচীর ১৯জন শিক্ষক নয় মাস ধরে বেতন-ভাতা ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া পাচ্ছেন না। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এ কর্মসূচীর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ কর্মসূচীর পাকুন্দিয়া উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্র্থীদের শিক্ষা দানের লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। পাকুন্দিয়া উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) নামের একটি বেসরকারী সংস্থা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও নয় ইউনিয়নে ৫৪টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রতিটি শিখন কেন্দ্রের জন্য মাসিক ভাড়া ১ হাজার ৫শ টাকা নির্ধারন করে তাদের নিয়োগপত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ পাওয়া ৫৪জন শিক্ষক ২৩ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদান করেন।
নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক জানান, কাজে যোগদানের এক মাস পরেই ৫৪জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯জন শিক্ষকের বেতন ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ১৯জন শিক্ষক নয় মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। যে ঘর ভাড়া নিয়ে শিখন কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই ঘরের ভাড়াও পরিশোধ করা হচ্ছে না। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চ মাসের বেতন ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া টাকা পেয়েছিলেন তারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষক সাবিকুন্নার, পারুল আক্তার, মাহমুদা আক্তার ও জাহানারা রহমানসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের নিয়োগ দেওয়ার আগে প্রকল্পের সুপারভাইজার এনায়েত উল্লাহ, শামছুজ্জামান, নাজমুন্নাহার ও লুৎফুননেছা আমাদের কাছে ১২ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবী করে। আমরা দিতে অস্বীকার করলে তারা বলেন, এই টাকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। নইলে চাকুরী হবে না। তাই আমরা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছি। শুধু তাই নয়, আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন থেকে ৫শ টাকা এবং শিখন কেন্দ্রর ভাড়া থেকে ৩শ টাকা করে কেটে রেখেছে অফিস।
এ ব্যাপার সুপারভাইজার এনায়েত উল্লাহ বলেন, তারা আমার কাছে কোন টাকা দেয়নি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
সুপারভাইজার শামছুজ্জামান বলেন, তৎকালীন প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহ আলম ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে আপনাকে জানাব।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কার্যালয়ের বর্তমান প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহীন হায়দার বলেন, উপজেলার প্রতিটি এলাকা যাচাই-বাছাই করে মোট ৫৪টি বিদ্যালয়ের তালিকা ইউএনও স্যারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইউএনও স্যার মাত্র ৩৫টি বিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। ১৯টি বিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছেন না। ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবশ্য ১৯টির অনুমোদন আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। কারণ আমি গত জুলাই মাসে এই অফিসে যোগদান করেছি।
তৎকালীন প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, আমি গত জুন মাসে চাকুরী ছেড়ে চলে এসেছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা এ বিষয়ে বলতে পারবে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, যাচাই-বাছাই করে এ প্রকল্পে মোট ৩৫জন শিক্ষকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পরে আমাকে না জানিয়ে আরও ১৯জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছে পপি। এ বিষয়ে এখন কিছুই করার নেই বলে তিনি জানান।