মিজানুর রহমানঃ
আগামী ২রা নভেম্বর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম আকন্দ, বর্তমান মেয়র আখতারুজ্জামান খোকন ও এ পৌরসভার প্রথম মেয়র এডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দীন মাঝে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ও সাধারণ ভোটারা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র অনুযায়ী ২০০৬ সনের ২৪ এপ্রিল পাকুন্দিয়া সদর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী হোসেন্দী ও নারান্দির কিছু অংশ নিয়ে পাকুন্দিয়া পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সীমানা নির্ধারণের জটিলতার ফলে সৃষ্ট মামলার ৫ বছর পর পাকুন্দিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন ২৭ অক্টোবর ২০১১ সাল অনুষ্ঠিত হয়। নবগঠিত পাকুন্দিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাড. জালাল উদ্দিন বিজয়ী হয়েছিলেন।
দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ৩১শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত এ পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়ের আক্তারুজ্জামান খোকন নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৬৪৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৭৫ ভোট। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মেছবাহউদ্দিন (নৌকা) পান ৪ হাজার ৩৪৭ ভোট। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। পৌরসভায় এবার তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে পৌর নির্বাচন।
পৌরসভায় এবার প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হচ্ছে। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ দুটি দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. নজরুল ইসলাম আকন্দ। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী করা হয়েছে ব্যবসায়ী ও আলেম মাওলানা আতাহার আলীকে। দলীয় এ দুই প্রার্থী ছাড়াও প্রতীক ছাড়া বিএনপির দুই প্রার্থী। তারা হলেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান খোকন (নারিকেল গাছ) এবং পৌরসভার প্রথম মেয়র উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন মোবাইল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এবং আওয়ামীলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো: মোতায়েম হোসেন স্বপন (জগ) বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
নির্বাচনী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে আগের দুটি নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গেছে। এর পিছনে আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দলকে দায়ী করছেন অনেকেই। এবারো সামগ্রিকভাবে পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ্যে রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে নৌকা প্রতীক লাভ করেছেন পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের প্রথম কাউন্সিলর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আকন্দ। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও এবার সেসব দৃশ্যমান নয়। বরং বেশির ভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশীই নজরুল ইসলাম আকন্দকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে স্বাগতম জানিয়েছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে নজরুল ইসলাম আকন্দকে ঘিরে এখন জয়ের স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ।
যদিও ১০ অক্টোবর মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ সময়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোতায়েম হোসেন স্বপন। তবে বিএনপির দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং বিএনপির দুইজন হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করায় এটিকে আওয়ামী লীগের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগকে এখন জয়ী হতে হলে দলের মধ্যে বিবদমান দ্বন্ধ ও বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্ত পৌরসভার সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম আকন্দ, বর্তমান মেয়র আখতারুজ্জামান খোকন ও এ পৌরসভার প্রথম মেয়র এডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দীন মাঝে ত্রিমুখী লড়াই হবে।