আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বাড়ির জায়গা দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহতরা হলেন, উপজেলার মান্দারকান্দি গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মো.মোজাম্মেল হকের স্ত্রী মান্দারকান্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা জাহান ও তার মেয়ে কুলিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহমিনা আক্তার সিমু (২৮)। গুরুতর আহত সুলতানা জাহান গত ৯দিন ধরে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় কাতরাচ্ছে।
গত ৩০অক্টোবরের এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই আহত তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে সাতজনকে অভিযুক্ত করে পাকুন্দিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার ৯দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
অভিযুক্তরা হলেন, একই গ্রামের মো.নজরুল ইসলাম, নেছার উদ্দিন, মো.গালিব, জাকিয়া সুলতানা মেওয়া, সাহেরা খাতুন, জুবায়ের ও হাওয়া আক্তার।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একই বাড়ির মৃত নূরুল আমিনের ছেলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। এনিয়ে এলাকায় একাধিক সালিস দরবার হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এরই জেরে গত ৩০অক্টোবর বেলা আড়াইটার দিকে নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের বসত ঘরের সামনের খোলা জায়গাটি জবর-দখল করে সেখানে একটি টিনের একচালা নির্মাণ করে। এসময় বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সুলতানা জাহানকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়। একপর্যায়ে নজরুল ইসলাম লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে রক্ষা করতে তাহমিনা আক্তার এগিয়ে গেলে তাকেও বেধড়ক পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে নীলা-ফুলা জখম করে। তাদের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
আজ মঙলবার সকালে সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের বসতঘরের প্রধান ফটকের সামনে টিন দিয়ে একচালা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সে ঘরের ভেতর গাঢ় সবুজ রঙের একটি প্রাইভেটকার রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেটি নজরুল ইসলামের। এতে বসতঘরের ভেতরে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুলতানা জাহান বলেন, নজরুল ইসলাম ও তার লোকজন আমার বসতঘরের সামনে জবর দখল করে টিনের চালা নির্মাণ করায় চলাফেরায় খুবই সমস্যা হচ্ছে আমাদের। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিস দরবার হলেও দরবারিদের কোনো সিদ্ধান্তই সে মানেনি। আমার কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তাদের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
তবে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, তার ঘরের সামনে আমি জায়গা পাই। তাই আমার জায়গায় আমি ঘর নির্মাণ করেছি।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া থানাধীন আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়েজ বলেন, অভিযুক্ত ও তার আত্মীয় স্বজন বিষয়টি বাদী পক্ষের সাথে আলোচনা করে মিমাংসার জন্য ২-৩দিনের সময় চেয়েছেন। যদি এ বিষয়ে মিমাংসা না হয় তাহলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।