স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলামের দোকান, গ্যারেজ ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (১১ আগষ্ট) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কিশারগঞ্জ শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে উপজেলা যুব লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
মানববন্ধনে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ নুরুন্নবী বাদল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুব্রত পাল, নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ, হিলচিয়া ইউয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য শেখ রফিকুন্নবী সাথী, কেন্দ্রীয় যুব লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আরকান, বাজিতপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খোকন, বাজিতপুর উপজেলা পৌর যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক নাদিম আহমেদ, বাজিতপুর উপজেলা ছাত্র লীগের পাঠাগার সম্পাদক যুবায়ের আহমেদ, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বাজিতপুর উপজেলা যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমি কলেজ শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি ছিলাম। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু’র বাসার সাথে আমার বাসা ছিল। তখন বিরোধী দল থাকায় হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, জেল কেটেছি। সে সময় বিএনপি’র কেউ আমার বাড়িতে হামলা করার সাহস পায়নি। আজকে যখন আমার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন আমার দলের নেতাদের নির্দেশে উপজেলার মাথুরাপুর ও রাবারকান্দি এলাকায় আমার দোকান ও অফিসে হামলা হয়। গত ১৫ বছর যাবত বাজিতপুরকে যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছে তাদের ব্যাক্তিগত বাহিনী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করছে। বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফ বিএনপি-জামায়াতের কর্মী দিয়ে গুন্ডাবাহিনী বানিয়েছেন। তাদের দিয়ে উপজেলার সকল অপরাধ সংঘঠিত করেন। ত্যাগী আওয়ামী লীগের কর্মীদের অপমান অপদস্থ করেন। বাজিতপুর শহরে লুটপাটের রাজ¦ত্য কায়েম করেছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে তার পেটুয়া বাহিনী হামলা চালায়। মেয়রের ভাই বর্তমান সংসদ সদস্য হওয়ায় রাজনীতিতে তাদের প্রতিপক্ষ থাকতে পারবে না। প্রতিপক্ষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) বিকেলে মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের বাহিনী আমার (শফিকুল ইসলাম) দোকান, গ্যারেজ ও অফিস ভাঙচুর করেছে। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতেও আঘাত করে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিকলী-বাজিতপুর আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ আফজাল হোসেনের বিপরীতে প্রার্থীদের সাথে কাজ করার কারণে হামলা করা হয়েছে। গত রমজান মাসেও এই বাহিনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ নুরুন্নবী বাদলের বাসায় গুলি করেছে। পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সধারণ সম্পাদক ফাইজুলের দোকান ও গ্যারেজ ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। উপজেলা ছাত্র লীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের আহম্মেদের বাড়িতে হামলা করে মোটর সাইকেল নিয়ে যায়, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মিজবা উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। রাজনৈতিক নেতারা স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতি কর্মকান্ড করতে পারছে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুব্রত পাল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করার অপরাধ কি? তাদের অপরাধ একটাই, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে (নিকলী-বাজিতপুর) বর্তমান সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সাথে না গিয়ে অন্য যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের সাথে সবাই মাঠে কাজ করছে। আনোয়ার হোসেন আশরাফ বর্তমান সংসদের ভাই নেতাকর্মীদের প্রতিহত করতে তাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। বাজিতপুরে এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করা হয়েছে। বাজিতপুরের মানুষ এই শাসন থেকে মুক্তি চাই। বর্তমান সংসদ আফজাল হোসেন ও মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের নেতৃত্বে বাজিতপুরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আজ নির্যাতিত-আতিঙ্কিত।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ নুরুন্নবী বাদল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সকল উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন সেখানে শোকের মাসে আজকে সাংবাদিকদের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কথা বলতে হবে তা ভাবতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফ বলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাথুরাপুর এলাকায় তার বাড়ির সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি জমি দখল করে দোকান ও কেন্দ্রীয় যুব লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুব্রত পাল ব্যক্তিগত অফিস নির্মাণ করতে চাই। স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন এতে বাধা দেয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার ভাই যেহেতু এমপি ও আবারো এমপি প্রার্থী তাকে কিভাবে প্রতিহত করা যায় সেই জন্য আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবি ভাঙচুরের বিষয়ে বলেন, আমি (আনোয়ার হোসেন আশরাফ) নৌকা মনোনয়ন নিয়ে দুই বারের মেয়র আমার ভাই (আফজাল হোসেন) তিনবারের এমপি আমরা কেন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙতে যাব। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি ২/৩ শতাংশ জায়গা দখল করে দোকান ও অফিস নির্মাণ করতে পারলে পরবর্তিতে তারা নিজেদের দাবি করবে। মূলত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সংসদকে ঘায়েল করার জন্য এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙচুরের বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।