প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ,বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

0

স্টাফ রিপোর্টারঃ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারও পূর্বের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। মোতায়েন থাকবে ৫ প্লাটুন বিজিবি।

সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। তবে আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে কিংবা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ছাতা নিয়ে ময়দানে প্রবেশের কথা আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।

রোববার (৭ এপ্রিল) শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, র‌্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম (বার) কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। মাঠের অভ্যন্তরে সুপেয় পানি, অযুখানা ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার নিযুক্ত করা হবে। নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার মোতায়েন থাকবে। একই সাথে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এখানে দায়িত্বে থাকবেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে বলেও জানান তিনি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে সকাল ৬টায় ট্রেন ছেড়ে আসবে এবং ভৈরব থেকে পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে পুনরায় ১২টার সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, প্রথমত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ১৯৭তম ঈদ জামাতের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। ২০১৬ সালের ঘটনাটা মাথায় রেখে  আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। এবারও পূর্বের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। মাঠের প্রতিটি গেইটে আর্চওয়ে থাকবে আর্চওয়ের মধ্যদিয়ে আপনাকে চেকিংয়ের মাধ্যমে মাঠে প্রবেশ করতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র‌্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে মাইনো কোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। পুলিশের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আশপাশের হোটেল গুলোতে বাড়তি নজরদারি কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ থাকবে। নিরাপত্তায় কোনরকম ঘাটতি থাকবে না। এছাড়াও পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে তাই আমাদের এই আয়োজন। এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। বোম ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এছাড়াও মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। আমরা কোনো হুমকি মনে করছি না।

ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪’র অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা, দুটি ওয়াচ টাওয়ার মাধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে শতাধিক র‌্যাব সদস্য মোতায়ন থাকবে। দুই থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করবেন তারা। জঙ্গি হামলার কোন থ্রেট নেই বলে ও জানান তিনি।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মাঠের রং করা, দাগ কাটা থেকে শুরু করে মুসল্লিদের অজু ও গোসলের সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে।

জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত অংশগ্রহণ করেন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে, প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের চেয়েও বড় বড় ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠিত হলেও মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতই এ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

Share.