আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
জন্মের ১৫ দিন পরই এক শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন বাবা। দুগ্ধ পোষ্য সন্তান হারানোর বেদনায় কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মায়ের। এখন কান্না করলেও সে চোখে আর পানি আসে না। বিক্রি হওয়া ওই সন্তানকে ফেরত পেতে দুই মাস ধরে পাগলের মতো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন অসহায় মা। পাড়া-প্রতিবেশীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তার কোলে সন্তান ফেরেনি।
এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামে। অসহায় এই মায়ের নাম মোছা.আছিয়া খাতুন। তিনি পেশায় একজন গৃহকর্মী। তার স্বামীর নাম রবিউল ইসলাম। তিনি পেশায় একজন টমটম চালক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০বছর আগে উপজেলার খামা গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে রবিউল ইসলামের (৩৫) সঙ্গে পাশর্^বর্তী কটিয়াদী উপজেলার আবদুল গফুরের মেয়ে মোছা.আছিয়া খাতুনের (২৫) বিয়ে হয়। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত মাঝ বয়সী এই দম্পতি অনেক দিন ধরেই কষ্টে-সৃষ্টে দিনযাপন করছেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। এরই মধ্যে এই দম্পতির সংসারে ইতি (৫), সাগর (৩) ও কুলসুম (দুই মাস) নামে তিন সন্তান জন্ম নেয়। গত তিন মাস আগে এই দম্পতির সংসারে কুলসুম নামে ছোট শিশু কন্যাটির জন্ম হয়। এরপর আবারও এই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। এর জেরে মায়ের অগোচরে সদ্য জন্ম নেওয়া কুলসুমকে বিক্রি করে দেন বাবা। এরপর থেকেই সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে স্বামীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু এখনও সন্তানকে ফিরে পাননি ওই অসহায় মা।
কুলসুমের মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমাকে না জানিয়ে গোপনে আমার দুধের সন্তানটিকে বিক্রি করে দিয়েছে স্বামী। আমি সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে বললে আমাকে প্রতিদিনই মারধর করে। তিনি আরও বলেন, আমি শুনেছি ২৫হাজার টাকার বিনিময়ে কাপাসিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে আমার সন্তানটিকে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি আমার সন্তানকে ফেরত পেতে স্বামীসহ এলাকার অনেক মানুষের কাছে গিয়েছি। কেউ আমার সন্তানকে এনে দেয়নি। সন্তানকে ফেরত পেতে প্রশাসনের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তিনি।
কুলসুমের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, অভাবের সংসার। খাবার জোগাড় করতে পারিনা। না খেয়ে থাকতে হয়। তাই ২৫হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করে একটি টমটম গাড়ি কিনেছি। এখন এই টমটম চালিয়ে টাকা রোজগার করছি। সন্তানটিকে কোথায় ও কার কাছে বিক্রি করা হয়েছে জানতে চাইলে, রবিউল অসংলগ্নভাবে কখনো বলেন আড়ালিয়া, কখনো বলেন ঢাকায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.খুরশীদ উদ্দিন বলেন, তিন মাস বয়সী কন্যা শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য। এটা খুবই দুঃখজনক। এবিষয়ে রবিউল কারো কোনো কথা শুনছে না। তাকে আইনের আওতায় এনে সন্তানটিকে উদ্ধারে প্রশাসনের প্রতি আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আপনার কাছে শুনেছি মাত্র। সন্তানটিকে কোথায় বিক্রি করা হয়েছে ঠিকানা সংগ্রহ করে অতি দ্রুত তাকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।