স্টাফ রিপোর্টারঃ
খোলা হয়েছে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্ধুক। সিন্ধুকে টাকা, স্বর্ণ, রুপা ও বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও মিলেছে বিভিন্ন ধরনের চিঠি। যেখানে সাধারণ মানুষজন মনের বাসনা পূরণে আল্লাহর কাছে চিঠি লিখেছেন। তাদের মধ্যে একজন চিঠির মাধ্যমে দেখা চেয়েছেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজাহারিকে।
চিঠিতে লিখেছেন, ১২ বছর ধরে আমার এই কষ্ট শুধু কুফুরি জ্বালা। যারা আমারে এই কষ্টে জ্বালায়ছে আমি তোমার কাছে তাদের বিচার চাই না। বিনিময়ে আমার নামাজের সওয়াব তাদেরক দিয়ে দিও। আমি মানুষের ক্ষতি করতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই আল্লাহ। তুমি আমার আল্লাহ। আমার জীবনে ইসলামের নায়ক মিজানুর রহমান আযহারির সাথে মরণের আগে হলেও সাক্ষাত করতে চাই।
অন্য এক চিঠিতে নিজের পছন্দের মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চিঠি লিখেছেন আল্লাহর কাছে। লেখা রয়েছে, সকল প্রশংসা শুধু তোমার জন্য আল্লাহ। আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। হে আল্লাহ তুমি তো দয়ালু তাই আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই মালিক। আমি তাকে হালাল ভাবে নেককার জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। আল্লাহ তুমি তাকে যেনো আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করো।
কোটিপতি হতে চেয়েও লিখেছেন একজন, যেখানে লেখা রয়েছে হে আল্লাহ আমাকে তোমার হুকুম হলে এক বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদশালী হালাল ভাবে ধনী বানিয়ে দাও। আমি ধনী হলে প্রতিবছর আপনার এই মসজিদে ১টা করে ছাগল বা সমপরিমান টাকা দিব। আমার মৃত্যু পর্যন্ত। আমার যে কাজ ধরি সফল হয়নি। তুমি দয়া কর আমার উপর। আমি জীবনে সফল হতে পারি এবং আমার যত জানা-অজানা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তায় খোলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্ধুক। দান সিন্ধুক থেকে এবার ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার (১৭ আগষ্ট) সকাল ৮ টায় মসজিদের ৯টি দান সিন্ধুক খোলা হয়। পরে বস্তায় ভরে মসজিদের ২য় তলায় মেঝেতে ঢেলে সাড়ে ৯টায় শুরু হয়েছে গণনা কার্যক্রম।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে ৩ মাস ২৬ দিন পর পাগলা মসজিদের দান সিন্ধুক খোলা হয়েছে। যেখানে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ১৫জন পুলিশ সদস্য ৯ জন আনসার সদস্য, ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, ৩০জন সেনা সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গণনা কাজে ২৪৫জন মাদ্রসার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। দিনভর গণনা শেষে রাতে মোট টাকা পরিমাণ জানা যাবে।
পাগলা মসজিদে দান করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয় এই আশা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এখানে দান করে থাকেন। যেখানে টাকা, স্বর্ণ, রুপা, বৈদেশিক মুদ্রাসহ গবাদি পশু দান করে থাকেন।
সর্বশেষ পাগলা মসজিদের দান সিন্ধুক থেকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা এ যাবত কালের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। গণনায় ৯৮জন মাদ্রাসার ছাত্র, ৯জন শিক্ষক, ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১০ জন আনসার সদস্য অংশ গ্রহণ করেন। দিনভর গণনা শেষে রাত ২টায় দানের পরিমান জানা যায়।
এছাড়াও দান সিন্ধুকে টাকা ছাড়া স্বর্ণ, রুপা, রিয়েল, রিংগিত, ডলার পাওয়া গেছে। প্রতি তিনমাস পর পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হলেও এবার ৩ মাস ২৬ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। দান সিন্ধুক খোলার সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল করিম উপস্থিত ছিলেন।