আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
মাহফুজুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য। চাকরি শেষে তিনি গ্রামের বাড়ি এসে মাল্টার বাগান করার পরিকল্পনা করেন। তখন বিষয়টি পরিবার ও এলাকার কেউই ভালোভাবে নেয়নি। তবে মাহফুজও দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিন বছর আগে নিজের কেনা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন তিনি। মাত্র তিন বছরেই আজ তিনি একজন মাল্টা চাষে সফল উদ্যোক্তা। তাঁর বাগানে এখন ফলে ফলে ভরে গেছে। বাজারে ভালো দাম পেলে তিনি অনেক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
জানা গেছে, মাহফুজুর রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার বীরপাকুন্দিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত মুঞ্জুরুল হক। তিনি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে (বিজিবি) চাকরি করতেন। ২০১৫সালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। গ্রামের বাড়ি এসে তিনি ভাবলেন বেকার বসে না থেকে একটা কিছু করা প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি শখ ও স্বপ্ন পূরণ করতে বাড়ির সামনে নিজ হাতে গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। নিবিড়-পরিচর্যা আর যতেœ চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এবছর প্রতিটি গাছেই ফলে ভরপুর।
এ ব্যাপারে মাহফুজুর রহমান বলেন, টেলিভিশনে দেশের বিভিন্ন জেলার মাল্টা চাষের ওপর প্রতিবেদন দেখে আমি এ ফল চাষে আগ্রহী হই। এরপর ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আমি ৪৫শতাংশ জমিতে ২০১৯সালে বারি মাল্টা-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করি। ১০ফুট পরপর ছয় মাস বয়সী চারা গাছ রোপণ করি। মোট ২৩০টি চারাগাছ রোপণ করা হয়। গত বছর গাছে ফল আসলেও তা বিক্রি করা হয়নি। আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এবছর গাছে পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। আশা করা যাচ্ছে গাছভেদে ১৫থেকে ৩০কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে গাছ থেকে ফল নামানো শুরু হবে। বাজারে বর্তমানে পাইকারি মাল্টা ২০০-২৪০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ২০০টাকা কেজি হলে প্রতি গাছ থেকে গড়ে ২০কেজি মাল্টা পাওয়া যাবে। যার দাম হবে চার হাজার টাকা। সেই হিসেবে ২৩০টি গাছ থেকে নয় লাখ ২০হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তবে এবার মাল্টা বিক্রি করে লাভের আশা দেখছেন তিনি।
মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, গাজীপুরের একটি নার্সারী থেকে প্রতিটি চারাগাছ তিনি ৫০০টাকা দর হিসেবে এক লাখ ১৫হাজার টাকায় কিনেছেন। এছাড়া শ্রমিকের মজুরি, জমিতে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ আরও প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছেন। তিনি মাল্টা বাগান গড়ে তুলতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করেছন। তিনি আশা করছেন, এবছর তিনি নয় লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন। পরের বছর তিনি দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন। এছাড়া ফলের পাশাপাশি মাহফুজুর রহমান নিজের বাগানে মাতৃ গাছ থেকে বাকল দিয়ে গ্রাফটিং করে চারা উৎপাদন করছেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.মোশারফ হোসেন বলেন, পাকুন্দিয়ার মাটি যে কোনো ফলের জন্য খুবই উপযোগী। উপজেলার বীর পাকুন্দিয়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি ছাড়াও এ উপজেলায় আরও ৩০-৩৫জন চাষী মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। তারা মাল্টা বাগানে কোনো রকম ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাল্টা চাষীদের সার্বক্ষণিক সবধরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।