আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
স্বাধীনতা সংগ্রামের ৫০ বছর পর বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ মিলন মেলায় প্রায় ৩০০ বীরমুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মিলন মেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রাণের উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাকুন্দিয়া উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ মিলন মেলার আয়োজন করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করলেও অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি স্বাধীনতার পর থেকে। তাই মুজিব জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁরা একত্রিত হয়েছেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পর অনেকের সঙ্গে অনেকের দেখা না হলেও আলাদা হয়নি তাদের মন ও হৃদয়। বদলায়নি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। পুরাতন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে সেজে-গুঁজে সকাল থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় মাঠে এসে উপস্থিত হয়েছেন সবাই। এ সময় পুরাতন বন্ধুদের খোঁজে বের করে একে অপরের সঙ্গে কোলা-কোলি, কুশল ও মতবিনিময় এবং একে অপরের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছেন। মন খুলে কথা বলেছেন পুরাতন ও বর্তমান দিনের।
মিলন মেলায় উপস্থিত বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ৫০ বছর পর আমরা আজ একত্রিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত। একে অপরের সঙ্গে কুশল ও মতবিনিময় করছি। পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এ সুযোগটি অনেক বছর পর পেয়েছি। তাই আজকের দিনটাকে শুধু মিলন মেলাই বলব না। আমি এ দিনটিকে সোনালী মেলা বলব। আজকের দিনটি আমাদের জন্য চিরকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. মিছবাহ উদ্দিন বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইতিমধ্যে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। আমরাও কখন মারা যাই বলা যায়না। আর হয়তো সবাই এক সাথে নাও হতে পারি।
এ মিলন মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেক কেটে এ মিলন মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রিলাইয়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মো. জালাল উদ্দিন ও কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আসাদুল্লাহ।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মিছবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিন সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ডিপুটি কমান্ডার মো. বাছির উদ্দিন ফারুকী ও আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাশেম, পাকুন্দিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মো. হাফিজুর রহমান ও মুজিবুর রহমান, পাটুয়াভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাব উদ্দিন, বুরুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল, নারান্দী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদ প্রমুখ।