স্টাফ রিপোর্টারঃ
শাক-সবজি খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আর তা রান্না করে খাওয়াটায় স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যদি কাঁচা খাওয়া হয়, তাহলে বিষয়টা অবাক করার মতোই। ঠিক এমনই এক ব্যক্তির দেখা মিলেছে কিশোরগঞ্জে। যিনি রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা খাওয়াতে বেশ স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন। তাই তো প্রতিদিনই তার খাদ্য তালিকায় থাকে বিভিন্ন প্রকারের কাঁচা শাক-সবজি।
সিরাজ উদ্দীন মাষ্টারের বড় সন্তান আনোয়ার সিরাজী (৫০) নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের পূর্ব হাত্রাপাড়া গ্রামে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। পেশায় কৃষক। পরিবারে এক মেয়ে, প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।
জানা যায়, আনোয়ার সিরাজী ১০ বছর যাবত কাঁচা সকল শাক-সবজি থেকে পছন্দ করেন। তার খাদ্য তালিকায় লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, পালং শাক, চিচিঙ্গা, কপি, করলা, পালং শাক, পুই শাক, সিম, সরিষার ফুল, গাজর, টমেটো, মূলা, কাঁচামরিচ, পেপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। খেতে পারেন কাঁচা মাছ ও মাংস। ১০ বছর আগে মরনব্যাধি এক রোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন ডাক্তার ও পরিবারের সদস্যরা। তবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাক সবজি খেলে হয়তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারেন, ডাক্তারের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে প্রথমে রান্না করে খাওয়া শুরু করলেও একপর্যায়ে কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর থেকে সকল খাবার কাঁচা খেয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন তিনি। আনোয়ার সিরাজী পেশায় একজন কৃষক। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে আসেন বাড়ির পেছনে ফসলি জমিতে। সেখান থেকে সবজি তুলে সকালের নাস্তা করেন। এরপর নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। তবে অন্য সকলকে এভাবে খাওয়া থেকে দূরে থাকতে বলেন তিনি।
আনোয়ার সিরাজী বলেন, আমার অসুস্থতা দেখে ডাক্তার আমাকে বলেছিল আমি ১০-১৫দিন বেঁচে থাকবো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখনও বেঁচে আছি। আমাকে দেখে মানুষ ভয় পেতো। ১০ বছর যাবত কাঁচা শাক সবজি খেয়ে যাচ্ছি। দেশের এমন কোন শাক সবজি নেই যা আমি কাঁচা খেতে পারিনা। কাঁচা শাকসবিজ না খেলে আমার শরীরে সমস্যা হয়। প্রথমে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসি বাঁধা দিয়েছে। পরে তারা দেখল খেলে কোন সমস্যা হয় না। তার জন্য আর নিষেধ করেনি। শাক সবজি যত বেশি খায় আমার পেট ভালো থাকে। আমাকে ডাক্তার বলেছিল রান্না করে শাক সবজি খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কাঁচা খাওযার অভ্যাস করে ফেলেছি। প্রথমে দুই বছর শুধু পেপে ও বেল খেয়েছি। একটা সময় বেল না পেয়ে বেলের পাতা পেট ভরে খেয়েছি। আমি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রেশার সবসময় ৫০-৬০ থাকে। রক্তের সমস্যা থাকায় বেঁচে থাকার তাগিতে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ডাক্তার না করেছে কিন্তু কাঁচা না খাইলে ভালো লাগে না। এলাকাবাসি সবাই জানে। এখন যে অবস্থা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাঁচা শাক সবজি খেয়ে যেতে হবে।
আনোয়ার সিরাজীর চাচা শাহাবুদ্দিন বলেন, একসময় সে খুব অসুস্থ ছিল। এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। কাঁচা শাক সবজি সব খেতে পারে। এগুলো খেয়ে তার উপকার হয়েছে।
প্রতিবেশী আতাউর রহমান বলেন, আনোয়ার সিরাজী সব শাক সবজি খেয়ে ফেলে। আমরা দেখেছি করলা, লাউ, ফুলকপি, পাতা কপি সব খেতে। তার শারীরিক কোন ক্ষতি হতে দেখি নাই। সে খেয়ে ভালোই আছে।
মোঃ সোহেল বলেন, মানুষ তো কত কিছুই খায়। কিন্তু সেগুলো রান্না করে। আনোয়ার ভাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এমন লোক আমি কখনও কোথাও দেখি নাই। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীরের ক্ষতি হয় কি না। তিনি বললেন তার কোন ক্ষতি হয় না। তার এমন কান্ডে আমরা আনন্দ পাই।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা বলেন, এমন ভাবে কাঁচা শাক-সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিঁপূর্ণ। এতে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে রান্না করে খাবার খেলে খাদ্য গুণাগুণ গুলো পাওয়া যায়। কাঁচা শাক-সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ও ডিম থাকতে পারে। এবং এ থেকে তিনি পরজীবিতে আক্রান্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয় কাঁচা খাবার খাওয়ার কারণে কিডনি স্টোন হওয়া, লিভার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে এটি একটি মিরাক্ষল ঘটনা। মেডিকেল সাইন্সে এটি সহজে ব্যখ্যা করা কঠিন। তবে আনোয়ার সিরাজীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনাকে মীরাক্ষল উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক।