আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
পরিবারের চাহিদা মেটাতে একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ হতো লিচু। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ করছেন চাষিরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাওয়ায় গ্রামের শতভাগ মানুষই এখন লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। শুধু লিচু চাষ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এ গ্রামের কয়েকশত মানুষ। গ্রামটি এখন লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত। লাল ও গোলাপী রঙের লিচুতে পুরো গ্রামটি
এখন রঙিন। থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট ছোট পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ এবং দর্শক-ক্রেতাদের পদ চারণায় গ্রামটি মুখরিত।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙলবাড়িয়া গ্রামের চিত্র এটি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগুলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রাম জুড়েই বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির সামনের কাঁচা-পাকাসড়কের দুই পাশে সারি সারি লিচু গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকায় থোকায় পাকা রঙিন লিচু। নয়নাভিরাম এ লিচু পাখি ও শিশু-কিশোররা যাতে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য গাছের নিচে বসে পাহাড়া দিচ্ছেন চাষিরা। আবার সড়কের দুপাশে বসে লিচু বিক্রিও করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এমন সৌন্দর্য্যকে একটু উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষরা ভীড় করছেন গ্রামটিতে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুইশত বছর ধরে এ গ্রামে লিচু চাষ হচ্ছে। প্রথমে স্্বল্প সংখ্যক চাষি বাড়ির আঙিনায় লিচু চাষ করলেও এখন
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তারা। বর্তমানে এ গ্রামটিতে চার হাজারেরও বেশি লিচু গাছ রয়েছে। যা থেকে প্রায় দুই মেট্রিকটন
লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত পর্যটক এসে গ্রামটিতে ভীড় করছেন। শুধু তাই নয় বাগান থেকেই তারা লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
লিচু চাষি মো.মোখলেছুর রহমান দাদা ভাই বলেন, প্রতিবছরই যথাসময়ে লিচু গাছ পরিচর্যা দিয়ে ভালো ফলনের উপযোগী করা হয়। মুকুলের সময় ঘন কুয়াশা আর হালকা বৃষ্টিতে মুকুল ঝড়ে পড়ায় এবছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তাই তার বাগানটি এবার এক লাখ টাকা দাম করছেন ব্যাপারীরা। লিচু চাষি শামীম শাহ্ জানান, লিচুর ফলন কম হওয়ায় তার বাড়ির আঙিনার ১৬টি লিচু গাছ এবছর দুই লাখ ২০হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
লিচুর ব্যাপারী মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার পরও ফলন খুব একটা খারাপ হয়নি। লিচু এখনও পুরোপুরি পরিপক্ক না হলেও ঈদের কারণে লিচু বিক্রি পুরোপুরি শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি ১০০লিচু ৩৫০-৪০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লিচুর দাম আরও বাড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, মঙলবাড়িয়ার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী। এ গ্রামের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদুপ্রতিটি লিচুই গোলাপি রঙের। শাঁস মোটা, রসে ভরপুর গন্ধও অতুলনীয়। এ গ্রামের লিচু আগাম জাতের হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে্।