শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ফের মুখরিত পাকুন্দিয়ার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
শিক্ষার্থীরা ছিলো ঘরবন্দি। বিদ্যালয়গুলো ছিলো ফাঁকা। শ্রেণিকক্ষ ছিলো তালাবদ্ধ। ভেতরে ছিলো আবর্জনা ও ধূলি-বালির স্তুপ। ছিলো সুনসান নিরবতা। ছিলো ভুতুরে পরিবেশ। প্রাঙণ ছিলো গরু-ছাগলের চারণভূমি। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ফের যেন ফিরে পেল নতুন প্রাণ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় আনন্দের ফল্গুধারায় মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিলো দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অবশেষে অনেক জল্পনা-কল্পনার পর আজ রবিবার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে সব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা।

সকালে উপজেলার মঙলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁধে স্কুল ব্যাগ, পড়নে স্কুল ড্রেস ও মুখে মাস্ক পড়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা শুরু করে। এসময় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের সামনে মাঠের পশ্চিম পাশে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বেসিন, সাবান ও হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত পরিস্কার করে ক্লাসরুমে প্রবেশ করছে। যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদেরকে স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষকরা মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। ভেতরে প্রবেশের আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।

ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে ঢুকিয়ে অভিভাবকরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের দেখা পেয়ে শিক্ষার্থীরা একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ।

বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিহিরের মা সুলেখা খাতুন বলেন, দেড় বছর পর স্কুল খোলায় ছেলেটি ভোর থেকেই স্কুল ব্যাগ ও ড্রেস পরে রেডি হয়ে বসে আছে। কখন স্কুলে আসবে। তাই সকাল ৮টার সময়ই ছেলেকে নিয়ে স্কুলে এসে পড়েছি।

একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অধরার মা আঁখি আলম বলেন, আজ রবিবার স্কুল খোলার কথা শুনে ছেলে রাতেই সব বই-খাতা-কলম গুছিয়ে রেখেছে। ভোরে সবার আগে স্কুলে চলে আসবে। তাই ছেলেকে সাথে করে সকালে স্কুলে চলে এসেছি। স্কুল খোলা হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার লিনা, আয়মনা আক্তার সূচনা, মেরাজ ও আরাফাত বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলা হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। এখন থেকে প্রতিদিনই স্কুলে আসতে পারব। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারব। নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারব। স্কুল মাঠে খেলাধূলা করতে পারব। তাই আমাদের খুবই আনন্দ লাগছে।

মঙলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আলমাছ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশরুমে প্রবেশের আগেই তাপমাত্রা মেপে মুখে মাস্ক পড়িয়ে ও হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাতধুইয়ে ক্লাশরুমে প্রবেশ করিয়েছি। এছাড়াও রুটিন অনুযায়ী ক্লাশরুমে উপস্থিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাশ চলবে। শনিবার চতুর্থ শ্রেণী, রবিবার তৃতীয় শ্রেণী, সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণী ও মঙলবার প্রথম শ্রেণীর ক্লাশ হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুল খোলা থাকবে।

Share.