সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোন চোর-ডাকাত-দুর্নীতিবাজ পার্লামেন্টে যাবে না

0

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোন চোর, ডাকাত, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আর পার্লামেন্টে ঢোকার মতো কোনো সুযোগ পাবে না। জামায়াত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। সেই ফর্মুলা আপাত দৃষ্টিতে অনেকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে দিনব্যাপী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর ৯১টি দেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে জনগণ দলের মার্কাকে ভোট দেবে কোন ব্যক্তিকে ভোট দিবে না। যে যতো পার্সেন্ট ভোট পাবে সে ততো আসন পাবে পার্লামেন্ট। আর পার্লামেন্টে কারা জনপ্রতিনিধি হয়ে যাবে সেটা ঠিক করে দিবে দল। যদি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। বর্তমান সিস্টেমে এখন ধরেন এক জায়গায় ভোট হলো তিন লাখ। এই তিন লাখ ভোটের মাধ্যমে যিনি এক লাখ একান্ন হাজার ভোট পাবেন তিনি পাশ করবেন। আর এক লাখ একান্ন হাজার ভোট নেওয়ার জন্য ওই আসনের মাঝে সবচেয়ে কালো টাকার মালিক যিনি, যিনি সবচাইতে বেশি সন্ত্রাসী, যার দাপট বেশি, মাস্তানি বেশি, তাকেই দল সেখানে মনোনয়ন দেয় যাতে কেন্দ্র দখল করে এক লাখ একান্ন হাজার ভোট পেয়ে পাশ করতে পারে। এই সিস্টেম বাংলাদেশের মাটিতে বন্ধ করার জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রস্তাব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে। যখন দলগুলো তাদের ইসতেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবে জনগণ যে দলকে পছন্দ করবে সেই দলকেই ভোট দিবে। কারো ভোট মাইর যাবে না। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সবাই পার্লামেন্টে যাইতে পারবে পার্সেন্টিস অনুসারে।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিষয়টিকে নিয়ে কোন কোন সাংবাদিক, কোনো কোনো বন্ধু বলছেন, তাইলে তো আওয়ামী লীগ সিট পেয়ে যাবে। এত ভয় কেন? যে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ অগণতান্ত্রিক আচরনের জন্য, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, আন্দোলন করে এই দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে সেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসার মত কোন পরিবেশ আছে? কোন মুখে জনগণের কাছে এসে তারা ভোট চাইবে। তারাতো জনগণের ভোটের সিস্টেমটি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সুতরাং আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন? নির্বাচন দেন পার্সেন্টিসের আলোকে সিলেকশন হোক। আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমরা এটা দেখছি না। আমরা আগামী ২০ বছরের পরের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি, ১৫ বছর পরে কি হবে সেটা দেখতে পাচ্ছি,  এই দেশের রাজনীতিবিদরা সব ভদ্রলোক হয়ে যাবে। সবাই তখন ভোটারদের কে সম্মান করবে। আমার দল বাছাইতে হবে না। আর দলও তখন চিন্তা করবে খুনিদেরকে পার্লামেন্টে বসিয়ে দিলে আমার দল আর টিকবে না। এইজন্য জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। বিশ্বাস করি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা যেমন সংবিধানের স্বনিবেশিত হয়েছিলো ৯৬ সালে। এই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নির্বাচন ব্যবস্থাও জনগণ একদিন সমর্থন করবে ও সংবিধানের স্বনিবেশিত হবে এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের আমলে টাকা পাচার হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দুসররা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হিসাব চুরি হয়। বাংলাদেশ থেকে তাও হয়েছে। দেশটাকে একটা মগের মুল্লুক তৈরি করেছিল। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি, কারা কারা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করেছে ওয়েব সাইটে আছে তল্লাশি চালিয়ে প্রত্যেকের নামের তালিকা বের করে টাকা তো আনবেনই পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে জন সংখ্যা হল ১৭ কোটি। আর বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। তারমানে যে শিশু আজকে বাংলাদেশে জন্ম নিল তার মাথায় ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হল ঋণ। আমার মনে হয় একজন গ্রামের মানুষ সারা জীবনেও এক লক্ষ টাকা ঋণ নেয় না। অল্পতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু রাষ্ট্রের ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা ঋণের দায় এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার মাথায় আছে। এই ঋণের দায় থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যারা ঋণ নিয়ে দেশের ডেভলপমেন্টের নাম নিয়ে দুর্নীতি করেছেন, অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাদের সবার ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করার পর তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তার বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কেয়ারটেকার নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরে আনতে আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এই অবদান হচ্ছে শুধু জামায়াতের। শুধু একটি অবদানের জন্যই তো জামায়াতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করার উচিত ছিল। কিন্তু এই সাহসিকতা দৃঢ়তা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখানোর সাহস হিম্মত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের নেই। দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষেই জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারী মাওলানা নাজমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রকাশ্যে এ রুকন সম্মেলন কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তোরণ নির্মাণ করে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামী। আর এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

Share.