খায়রুল ইসলাম, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জঃ
কথায় আছে পরিশ্রম সৌভাগ্যের জননী। তেমনি এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী অদম্য সফল নারী উদ্যোক্তা মেহেরুন্নেছা। কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল প্রতিভা মেহেরুন্নেছাকে স্বচ্ছলতার পথ দেখিয়েছে। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ধূলজুরী গ্রামের আব্দুল মালেকের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা ছোট বেলা থেকেই জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রথমে তিনি কর্ম হিসেবে বেঁচে নেন দর্জির কাজ। গ্রামের মহিলা ও শিশুদের রুচিশীল পোশাক তৈরি করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। অধিক দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনি হোসেনপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (আইজিএ) প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিনি প্রতিরক্ষা ও শারীরিক দক্ষতা বিকাশের জন্য উপজেলা আনসার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। এছাড়াও তিনি পৌরসভার উন্নয়ন কমিটি ও স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। তার অক্লান্ত চেষ্টায় এলাকার ঝড়ে পড়া শিশুদেরকে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন স্কুল প্রতিষ্ঠাতা ঝড়ে রোধ করেন।
মেহেরুন্নেছা ২০১৭ সালে নিজস্ব অর্থায়নে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তোলেন গরু মোটাজাতাকরণ প্রকল্প। পরবর্তীতে ২০২০ সালে অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড হোসেনপুর শাখা থেকে ঋণ নিয়ে উক্ত প্রকল্পের কাজ সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার খামারে বিভিন্ন উন্নত জাতের ১০টি গরু রয়েছে। গত ঈদুল আযহার কোরবানী হাটে গরু বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করেন তিনি। গরুর খাদ্যের জন্য তিনি ধানের খড় মজুদ করে রেখেছেন। তা ছাড়া গরু খাদ্য হিসেবে নিজস্ব জমিতে ঘাস রোপন করে ব্যয় সংকোচন করেছেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লিজকৃত ১ একর জমিতে ধান চাষ করে বাম্পার ফলন ফলাচ্ছেন প্রতিবছর। মেহেরুন্নেছা ৪ কন্যা সন্তানের জননী হয়েও মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তিত নন।
প্রথম মেয়ে মৌসুমী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫, এইচএসসিতে জিপিএ-৪ এবং বি এস সি (অর্নাস) গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে উর্ত্তীন হন। দ্বিতীয় মেয়ে মিতাহুল জান্নাত শাপলা এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ততৃীয় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ নবম শ্রেণী এবং চতুর্থ মেয়ে হুমায়রা জান্নাত মুন্না প্রথম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন।
মেহেরুন্নেছা জানান, পারিবারিক জীবনে আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি দেশ ও সমাজের উন্নয়ন করে যাব। জানতে চাইলে হোসেনপুর পৌরসভার সংরক্ষিত-২ আসনের মহিলা কাউন্সিলর পারভীন আক্তার জানান, ব্যক্তি ও সমাজ উন্নয়নে মেহেরুন্নেছার মত নারী উদ্যোক্তার প্রয়োজন। তার এমন সাফল্য দেখে অন্য নারীরাও কর্মে এগিয়ে আসবে।