স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের ১২ ইঞ্চি লম্বা মুরালি যে কারো জিভে পানি এনে দিতে পারে। এর কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে। সুস্বাদু এই মুরালি এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রিয় মিষ্টান্ন। অনেক বছর ধরে অষ্টগ্রামে তৈরি হয়ে আসছে সুস্বাদু এই মুরালি। যারা হাওরে ঘুরতে আসেন বা কোনো কাজে আসেন একাবার হলেও তারা এর স্বাদ নিতে আসেন।
জানা গেছে, মুরোলি শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঁশি। বাঁশি সাধারণত ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। ধারণা করা হয়, মুরোলি থেকে খাদ্যদ্রব্য মুরালির উৎপত্তি। তবে কবে থেকে এই হাওর অঞ্চলে মুরালি তৈরি শুরু হয়েছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন তা বলতে পারেন না। এই মুরালি খেতে কিশোরগঞ্জসহ আশে পাশের জেলা থেকেও লোকজন আসে। এছাড়া অষ্টগ্রামের মুরালি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যান। তাই ইতিমধ্যে এই মুরালির সুনাম ছড়িয়েছে দেশের বাহিরেও।
অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষা ইকরদিয়া গ্রাম। নদীর ওপারেই হবিগঞ্জ জেলা। প্রতিদিনই এপার-ওপারের মানুষের যাতায়াত। কেউ বসে খেয়ে যান, কেউ বা আবার পরিবারের সদস্যদের জন্যও নিয়ে যান। এখানকার মানুষজন কোথাও বেড়াতে গেলেও মিষ্টির জায়গায় মুরালি নিয়ে যান। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আগের মতো এত বেশি মুরালি তৈরিও হয় না। আগে বেশ কয়েকটি মুরালি তৈরির দোকান থাকলেও এখন ঠিকে আছে মাত্র একটি। এখন এই একটি দোকানেও ভালো ব্যবসা হচ্ছে না।
মুরালি তৈতির কারিগর শাহেদ জানান, প্রথমে লবণ, তেল, পানি ও ময়দা মেখে ময়দার খামির করা হয়। তারপর ময়দার খামির বেলে বড় মোটা রুটির মতো বানিয়ে ছুরি দিয়ে ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি করে কাটা হয়। এরপর কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে সেগুলো ভেজে রাখা হয়। পরে গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরী করা হয় গুড়ের শিরা। মুরালির ভাজা টুকরোগুলোকে কড়াই থেকে তুলে বড় পাত্রে ভাজ করে রাখা হয়। পরে মুরালির উপর গুড়ের গরম শিরা ঢালা হয়। শিরা ঢালা শেষে মুরালিগুলোকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বড় চামচ বা হাতল দিয়ে নেড়ে তাতে ভালোভাবে গুড়ের শিরা মেশানো হলে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করে তৈরী করা হয় সুস্বাদু মুরালি। প্রতি কেজি মুরালি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়।
মুরালির দোকানের মালিক সালাউদ্দিন জানান, এটা আমাদের ইকরদিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এখান থেকে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও প্রবাসীরা বিদেশে এই মুরালি নিয়ে যায়। সিঙ্গাপুর, মালশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই মুরালি যায়। গুড়, তেল ও ময়দার দাম বৃদ্ধির কারণে তৈরি হচ্ছে কম। মুরালির দামও বৃদ্ধি হয়েছে তাই মানুষের চাহিদা একটু কমে গেছে। আগে মুরালি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন ১৬০ টাকা ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ২ কেজি কিনতেন সেই লোক এক কেজি নিচ্ছে। যার এক কেজি প্রয়োজন সে আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে ৪-৫ মণ বিক্রি করতে পারলেও এখন এক দুই মণের বেশি বিক্রি হচ্ছে না।
মুরালি খেতে আসা শামীম আহমেদ জানান, হাওডরে আসলেই অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া ঘাটের মুরালির স্বাদ নিতে আসি। নিজেও স্বাদ নেই বাড়ির জন্য নিয়ে যাই।
পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাছেদ মিয়া জানান, আমাদের অষ্টগ্রামের ইকরদিয়ার খাবার মুরালির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। বিভিন্ন সময় পর্যটকসহ বিভিন্ন লোকে হাওরে আসলে এই মুরালির স্বাদ নিতে তারা এখানে আসেন। এই মুরালি আগে অনেকেই তৈরি করতো তবে বর্তমানে শুধু সালাউদ্দিনের দোকানেই তৈরি হয়। এই মুরালি ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এত বড় সাইজের মুরালি হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া খেতেও খুব সুস্বাদ। তাই প্রবাসীরাও সঙ্গে করে এই মুরালি বিদেশে নিয়ে যায়। অষ্টগ্রাম এর পনির যেমন সারা বিশ্ব বিখ্যাত সালাউদ্দিনের দোকানের এই বড় মুরালিও তেমনি বিখ্যাত। অষ্টগ্রামের বিখ্যাত এই মুরালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিত্য পন্যের দাম কমলে এই ব্যবসা আরও অনেকেই দিবে এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। মুরালি মাধ্যমে জেলার সুনামও ছড়িয়ে যাবে।