আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
ফুটেছে সূর্যমুখী চরের বুক চিড়ে। ছড়িয়ে পড়েছে পুষ্পের হাসি দিগন্ত জুড়ে। পুষ্পপ্রেমীদের ঢল পড়েছে আছড়ে সুন্দরী রমনীর সাজসজ্জা পড়ে। এ যেন এক নতুন জীবন চরের প্রকৃতিতে ও মননে। মাটি ফুঁড়ে যেন উঠেছে নবীন সূর্য সম্ভাবনা নিয়ে।
ব্রহ্মপুত্রের ধু-ধু বালুচরের জমিনে এই প্রথমজেগেছে প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু অসাধারণ এক রূপবতি উদ্ভিদ সূর্যমুখী। তার রূপসৌন্দর্য দিয়ে পাগলপাড়া করে দিয়েছে প্রকৃতির মৌমাছি আর তরুণ তরুণীদের। তাইতো প্রতিদিন বিকেল হলেই পাগলপাড়া দর্শনার্থীর মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে সূর্যমুখী জমিনের চারপাশ ঘিরে। জমিনে ঢুকেই কেউ তুলছে ছবি, কেউবা সেলফি। এযেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
মনোমুগন্ধকর এই দৃশ্যটির দেখা মেলে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মাঠজুড়ে।যে মাঠে বাংলার বারো ভূঁইয়ার প্রধান মসনদে আলা বীর ঈশাখাঁর তরবারীর আঘাতে দ্বিখন্ডিত হয়েছিল তৎকালীন দিল্লির সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের তরবারী। দেশ-দুনিয়ায় যার ব্যাপক পরিচিত।সেই ঐতিহাসিক এগারসিন্দুর এলাকার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে যেন বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে হাসছে প্রকৃতির সন্তান সূর্যমুখী। আর শিশু মন নেচে উঠছেসেই হাসিরদোলায়। বাসন্তী রূপে হলুদ মাখা ফুলগুলোযেন ডাকছে অপরুপসৌন্দর্যের হাতছানিতে। আর পাগলপাড়া পুষ্প প্রকৃতি প্রেমী দর্শনার্থী তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও নব-দম্পতিদের ঢলনেমেছে ওই জমিগুলোতে। সৌন্দর্য প্রেমীদের ঘিরে জমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষীদের। দর্শনাথীদের পদচারনায় শতশত সূর্যমুখী গাছ মাটিতে মিশে গেছে। এরপরও সৌন্দর্য প্রেমীদের কথা চিন্তা করে আগতদের তেমন কিছু বলছেন না চাষীরা। তবে অনেকেই ফুল ছিড়ে ফেলার কারণে তারা অসন্তুষ্ট। তাই জমিনের কিনারে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন অনেক চাষী। সেখানে তারা লিখেছেন, ফুল ছেঁড়া নিষেধ। ইহা নিন্দনীয় ও দন্ডনীয় কাজ। সূর্যমুখী চাষে সহায়তা করুন, ফুল ছেঁড়া থেকে বিরত থাকুন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবারই প্রথম এ উপজেলায় কৃষি পুনবার্সন ও প্রনোদনার আওতায় এগারসিন্দুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০০জন কৃষককে এককেজি করে সূর্যমুখীর বীজ দেওয় হয়েছে। প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এ বিষয়ে সকলকে কৃষককে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাসহ যাবতীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পদক্ষেপ হিসেবে সরকার সূর্যমুখীর চাষ সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আট কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসা উপজেলার আতকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিবুল্লাহ আল মাহদি ও ইসমত আরা সুর্বনা দম্পতি জানান, এমন সৌন্দর্যে আমরা খুবই মুগ্ধ। একপাশে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে জলরাশি, অপর পাশে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। ফুটে আছে হাজারো হাজারো হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। সস্প্রতি এ দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেয়ে আমরা স্বপরিবারে এখানে এসেছি। এ স্মৃতি টুকু ধরে রাখতেই ছবি ও সেলফি তুলছি।
অনার্স চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী পাকুন্দিয়া গ্রামের মিলি আক্তার বলেন, এগারসিন্দুরের মাটিতে সূর্যমুখী বাগান গুলো মানুষের মন কেড়েছে। তাই এ দৃশ্য দেখতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে প্রকৃতি প্রেমীরা। এ জন্য আমি নিজেও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এসেছি ছবি ও সেলফি তুলতে।
এগারসিন্দুর এলাকার সূর্যমুখী চাষী বেগম আক্তার, আলাউদ্দিন, আবদুর রাশিদ ও রুকুন উদ্দিন তারা বলেন, তেল ও বীজের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবারই প্রথম এই এলাকার শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছি। ক্ষেত জুড়ে ফুলে ফুলে ভরে যাওয়ায় দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফুল গুলো ফেইসবুকে ভাইরাইল হওয়ায় মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে, তাদের আটকানো যাচ্ছে না। এখন সব শ্রেণির মানুষ ফটো তুলার জন্য ভীড় করছেন। তবে তাদের পায়ের নিচে পরে অনেক সূর্যমুখী গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও আমাদের কাছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ভালই লাগছে।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, এ উপজেলায় প্রথম বারের মত সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে পৌর এলাকাসহ উপজেলার নয়টি ইউপির ৩০০জন কৃষকের ৩০০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে কৃষকরা সুর্যমুখী ফল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতিবিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ২৪ থেকে ৩০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করছে সরকার। তিনি আরো বলেন, আমরা বাজার থেকে যে সাধারণ সয়াবিন তেল ক্রয় করি, তাতে ক্ষতিকর কোলেষ্টরেল আছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিক্ষর। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যায়, তাতে কোন ক্ষতিক্ষর কোলেষ্টরেল নেই।