আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
আমার বাড়ি যাইও বন্ধু, বসতে দেব পিঁড়ে, জলপান যে করতে দেব, শালি ধানের চিড়ে। শালি ধানের চিড়ে দেব বিন্নি ধানের খৈ, বাড়ির পাশে কবরী কলা গামছা বাঁধা দই…..।
পল্লী কবি জসিম উদ্দিন তাঁর কবিতার মাধ্যমে চিড়ে, দই এবং কবরী কলা দিয়ে বিন্নি ধানের খৈ খেতে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বিন্নি ধানের খৈ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। বিন্নি ধানের খৈয়ের চাষতো প্রায় উঠেই গেছে। হাটবাজারেও সেই খৈ এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। কালের বিবর্তনে বিন্নি ধানের চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাওয়ায় এ ধানের খৈয়ের দাম এখন আশাশচুম্বি। সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গত দুই-তিন বছর আগেও যেখানে প্রতি কেজি খৈ ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতো সেই বিন্নি ধানের খৈ এখন কেজি ৫০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
উপজেলার পোড়াবাড়িয়া এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি বিন্নি ধানের খৈ বিক্রি হচ্ছে ৫০০টাকায়। এতে অনেককেই খৈ না কিনে ভ্রুকুঁচকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে কেন এত দাম জানতে চাইলে খৈ বিক্রেতা কদ্দুছ আলী বলেন, বিন্নি ধানের চাষ কমে গেছে। কৃষকরা এখন আর আগের মত এই ধান চাষ করে না। তাই বিন্নি ধানের খৈও আগের মত পাওয়া যায়না। এ কারণে এ খৈয়ের দাম বেড়ে গেছে।
মুঞ্জুরুল হক নামের একজন খৈ ক্রেতা বলেন, প্রতি বছরই বৈশাখী মেলা থেকে বিন্নি ধানের খৈ কিনে দই এবং কলা দিয়ে খেয়ে থাকি। তাই এবছরও মেলা থেকে খৈ কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম শুনে হতবাক হয়ে পড়েছি। এক কেজি খৈ ৫০০টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতা। কি করব ভাই ২৫০টাকায় আধা কেজি খৈ কিনেছি। যে ভাবে সব জিনিসের দাম বাড়ছে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বুঝতে পারছি না।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম বলেন, এক সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার উচু জমিতে প্রচুর পরিমানে বিন্নি ধান চাষ হতো। বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের প্রভাবে বিন্নি ধান চাষ প্রায় হারিয়ে গেছে। কিছু কিছু কৃষক সখের বশে এ ধানের চাষ এখনও ধরে রেখেছেন। যদিও অন্য জাতের ধানের তুলনায় বিন্নি ধানের ফলন খুবই কম। প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৮ মণ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। চাহিদার তুলনায় যোগান কম। ফলে বাজারে এ ধানের দাম বেশি।