পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪জুলাই থেকে আলাদা-আলাদাভাবে এসব কর্মসূচী পালন করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নূর মোহাম্মদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো.রফিকুল ইসলাম রেনু সমর্থক নেতাকর্মীরা।

আজ রবিবার ফের এমপি নূর মোহাম্মদ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগকে বিএনপি-জামায়াত ও অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

দীর্ঘ প্রায় ২১বছর কমিটি না থাকায় কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলে দীর্ঘদিনের পুরনো কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কমিটিতে অ্যাডভোকেট মো.সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রীতিমত বিদ্রোহ করে বসে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা দল থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২জুলাই সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে কিশোরগঞ্জ-২(পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী)আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো.সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর গত ৯সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি জেলা থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ৬৭সদস্যের এ কমিটিতে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে এ কমিটি গঠন করায় ক্ষুব্ধ হন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে ১৫সেপ্টেম্বর সদ্য বিলুপ্তি কমিটির সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক ও নতুন কমিটির এক নম্বর সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.রফিকুল ইসলাম রেনু পদত্যাগ করেন। ওই দিনই তিনি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা এ পদত্যাগপত্রটি জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক আহমেদ উল্লাহর হাতে তুলে দেন। ১৯সেপ্টেম্বর বিকেলে তিনি এ কমিটি বাতিলের দাবিতে পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহে এক বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে এই নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে তাকে আমরা মানিনা। কারণ এই সোহরাব উদ্দিন এমপি থাকাকালীন তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকটি জনসভা ভাঙচুর করেছে। প্রশাসন দিয়ে ১৪৪ধারা জারি করেছে। দলের শতশত নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করেছে। পুলিশের ভয়ে মাসের পর মাস বাড়িছাড়া রয়েছে নেতাকর্মীরা। অথচ তাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ কমিটি আমাদের হতাশ করেছে। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। এই কমিটি মানিনা। অতি দ্রুত এ কমিটি বাতিলের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নূর মোহাম্মদের সমর্থক নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক মো.মোতায়েম হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশটি পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত সোহরাব উদ্দিনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নিষ্ক্রিয়, অযোগ্য, অপরিচিত ও বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের এ কমিটিতে রেখে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানিনা। অতি দ্রুত এ কমিটি বাতিল করার জন্য জেলা কমিটির প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। এ কমিটি বাতিল করা না হলে আগামি মাসের চার তারিখ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও বক্তারা হুশিয়ার দেন।

উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদের সঞ্চালনায় এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো.হুমায়ুন কবির, জেলা শ্রমিকলীগের উপদেষ্টা ও বর্তমান কমিটির সদস্য আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, সাবেক ভিপি ও বর্তমান কমিটির সদস্য আবদুল হাকিম, হোসেন্দী ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমান কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান হামদু, নারান্দী ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমান কমিটির সদস্য মো.শফিকুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিছবাহ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি নাজমুল হক দেওয়ান প্রমুখ।

দলে দ্বন্ধ ও কমিটি বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল বলেন, অনেকের ক্ষোভ থাকতেই পারে। কারণ, পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগ তিন-চার ভাগে বিভক্ত। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা সকল গ্রুপকে এক করে একটি সুন্দর কমিটি গঠন করতে কয়েক দফা চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি-আমরা ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অ্যাডভোকেট মো.সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৬৭সদস্যের এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে একেক গ্রুপের একেক রকম মন্তব্য থাকতেই পারে। তবে আপাতত এ কমিটি বিলুপ্ত বা ভেঙে দেওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই বলে তিনি জানান।

Share.