আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
সপ্তম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামি দুই নভেম্বর। এরই মধ্যে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন অন্তত ১০জন সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রাজনীতি করছেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দলে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে-এমন নেতাকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, তৃণমূলের গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে বিএনপির এ দুর্গে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বিগত পরপর দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এখানে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও ভোটের মাঠে লড়াই করার জন্য তারা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এরই মধ্যে তারা এলাকায় জোর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৭সালে পাকুন্দিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১সালে এ পৌরসভায় প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো.জালাল উদ্দিন (দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে) নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো.রফিকুল ইসলাম রেনু (মোটরসাইকেল প্রতীক)। ২০১৬সালের নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান খোকন (নারিকেল গাছ প্রতীক) নির্বাচিত হন। এসময় আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.মিছবাহ উদ্দিন (নৌকা প্রতীক)। তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ওই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের অপর যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মোতায়েম হোসেন স্বপন। কিন্তু মোতায়েম হোসেন স্বপনকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মিছবাহ উদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। ফলে আওয়ামীলীগে চরম বিরোধ দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে মুক্তিযোদ্ধা মিছবাহ উদ্দিন পরাজিত হন। এসব কারণে এবারও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। যদি ভুল ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে আবারও নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিছবাহ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বাবুল আহমেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মআহ্বায়ক মো. ফরিদ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম হাবিবুর রহমান চুন্নু, পাকুন্দিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম আকন্দ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক খোকা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এখলাছ উদ্দিন ও উপজেলা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক ।
এ ব্যাপারে পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের চরপাকুন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো.সোহেল রানা বলেন, কোনো বিশেষ ব্যক্তির পছন্দের নেতাকে মনোনয়ন না দিয়ে যদি তৃণমূলের পছন্দের নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলেই এ পৌরসভায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী পাশ করা সম্ভব। তা না হলে আবারও বিএনপির এ দুর্গে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ফেল করবে।
পাকুন্দিয়া পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্থানীয়ভাবে যিনি জনপ্রিয়, ভালো মানুষ, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সারা বছর মাঠে কাজ করছেন-এমন ব্যক্তিরই মনোনয়ন চাই আমরা। উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আবারও ফেল করবে দলীয় প্রার্থী।
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক মো.রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, যে ব্যক্তি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে সারা বছর মাঠে থেকে দলের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্য কোনো দল বা ব্যক্তির পেছনে কাজ করেনি-এমন ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আমি আশা করছি।