আব্দুল্লাহ আল সুমন, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি রাস্তার ওপরে মিল চাতাল নির্মাণ করেছে এক প্রভাবশালী। এই ঘটনায় যাতায়াত করতে না পেরে অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে প্রায় ২০ টি পরিবার। সোমবার (০৪ অক্টোবর) সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের গেলে অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। সমাধানের আশায় ছুটে আসেন ভুক্তভোগী বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ।
ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন জানান, এলাকাটিতে প্রায় ২০ টি পরিবারের বসবাস। তার নিজের বাসাতে ১৫ জন সদস্য। যেখানে কিছু স্কুলের ছাত্র ছাত্রী সহ তার অসুস্থ বাবা মা রয়েছে। বাসায় যাওয়ার ৮ ফুটের একটি সরকারি রাস্তা আছে তবে সেটা তারা ব্যবহার করতে পারছেনা।
তিনি বলেন, সরকারি রাস্তাটি স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাইদুল ইসলামের দখলে। তাই বেশ কিছু সময় থেকে আমরা অন্যের মালিকানাধীন ২ ফুটের রাস্তা ব্যবহার করছিলাম। আমার বাবা মা অসুস্থ হলে কাধে করে আধা কিলো হেটে তাদের এম্বুলেন্সে উঠাতে হয়েছে। তবে এখন সেই দুই ফুটের রাস্তাটির মালিক যায়গা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারি রাস্তাটি যদি আমরা না পাই, তাহলে নিজেদের বাসায় যাওয়া আসার আর কোনো সুযোগ থাকবেনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন যানবাহন চালিত একটি পিচঢালা রাস্তার সাথে সংযোগ হয়ে গ্রামটির দিকে একটি রাস্তা শুরু হয়েছে। তবে রাস্তাটি দুইশগজ সামনে গিয়েই থেমে যায়। সেখানে একটি বিরাট ধান শুকানোর চাতাল। চাতালটি শেষে আবার সেই রাস্তাটির সীমানা চোখে পড়েছে।
সেই এলাকার বাসিন্দা কালাম ও সোহেল জানান, সাইদুল কে বেশ কয়বার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। এরপর আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করেছি। তবে চেয়ারম্যানের চেষ্টাও বৃথা গেছে। আমাদের কোনো সমাধান দিতে পারেনি। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও অভিযোগ করেছি। তবে এখনও কোনো সমাধান নেই। এমন অবস্থায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমরা নিজেদের বাসায় এখন অবরুদ্ধ।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে এমন একটি অভিযোগ আসার পর আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। সাইদুল ইসলামের স্থাপনাটি সি এস রেকর্ডধারী রাস্তার উপরে নির্মিত। বিষয়টি আমরা ভূমি অফিস থেকে নিশ্চিত হয়েছি। তবে পরিষদ থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও রাস্তাটি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছি। গ্রামবাসীর জন্য প্রশাসনিক ভাবে সমাধান বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত সাইদুল ইসলামের সাথে। সরকারি রাস্তার ওপরে তার স্থাপনা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা আমার কেনা জমি। বিক্রেতা জমিকে থাকা সরকারি রাস্তার বিষয়টি গোপন করে জমিটি আমার কাছে বিক্রি করে আমাকে ঠকিয়েছে। অজান্তেই আমি স্থাপনা গড়ে তুলেছি। এখন বলা মাত্রই স্থাপনা সরানো সম্ভব না। আলোচনা সাপেক্ষে লম্বা সময় বা অন্যদিকে রাস্তা দেওয়া যেতে পারে। বিষয়টি আলোচনা করে দেখবো।
যদিও সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্যকোনো দিক দিয়ে রাস্তা দেওয়ার মতো তেমন কোনো সুযোগ নেই। সাইদুলের নির্মিত ধানের মিলের আটফুট চাতাল ছেড়ে দিলেই সঠিক মাপে রাস্তাটি বের করা সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান জানান, আমি কিছুদিন আগেই নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। অভিযোগটি আগের অফিসারের কাছে এসেছিলো। তাই আমি পরিষ্কারভাবে তেমন কিছু জানিনা বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।