আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একের পর এক হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে। এমনকি ভোটার ও প্রার্থীকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে নির্বাচন নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এক পক্ষ সমর্থন দিচ্ছে নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান বাবুকে। অন্যপক্ষ সমর্থন দিচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার এগারসিন্দুর ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুজ্জামান বাবু। এছাড়াও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন বাহাদিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামেন। এ কারণে ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় ভাবে কেউ নৌকার প্রার্থীর সমর্থনে, আবার কেউবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে গতকাল সোমবার সকালে নৌকার প্রার্থীর ৭/৮জন কর্মী নির্বাচনী কাজে মোটরসাইকেল যোগে বাহাদিয়া থেকে থানারঘাট এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় মজিতপুর এলাকায় পৌছলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় ৭/৮টি মোটরসাইকেলও ভাংচুর করা হয়। হামলায় নৌকার কর্মী প্রান্ত, রাতুল ও জয়নালসহ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। একই দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীরা নৌকার কর্মী শাজাহানের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তার স্ত্রী রেহানা আক্তার ও মেয়ে শারমিন আক্তার বাধা দিলে তাদের দুজনকেও মারপিট করে গুরুত্বর আহত করা হয়। পরে এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য নিয়ে ভর্তি করেন। এসব ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে নৌকা প্রতীকের কর্মী শাহজাহান মিয়া বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মো. অসাদুজ্জামানসহ ৩০-৩৫জন কর্মী সমর্থককে আসামী করা হয়। মামলায় পুলিশি অভিযান শুরু হলে গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছাড়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীসহ অনেক কর্মী-সমর্থক।
এদিকে নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের হত্যার হুমকি ও মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও গতকাল সোমবার একই সময় নুরুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে মোটরসাইকেল প্রতীকের কয়েকজন কর্মীর উপর হামলা চালানো হয় এবং মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। এসময় এরশাদ ও গোলাপসহ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ রিটার্ণিং অফিসারে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত রবিবার সকালে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নুরুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। বলে বেড়াচ্ছেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচন করলে গ্রাম ছাড়া করে দেবে। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও তার কর্মীরা নির্বাচনী কাজ করতে পারছেন না। রাস্তায় বাঁধা দিচ্ছে, পোষ্টার ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুজ্জামান বাবু বলেন, তার কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা করেনি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী আছাদুজ্জামানের কর্মী সমর্থকরা আমার কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে। আহতরা বর্তমানে পাকুন্দিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া আমার কর্মীদের আটটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, নৌকার প্রার্থীর অভিযোগ সত্য নয়। বরং আমার কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনী কাজে এলাকায় বেড়োতে পারছে না। নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা আমার কর্মীদের মারধর করছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. সাখাওয়াৎ বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানায় পাঠানো হয়েছে।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার জাহান মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। বর্তমানে এলাকায় পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
৬ষ্ঠ ধাপে আগামি ৩১ জানুয়ারি পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।