আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ৩১ জানুয়ারী সোমবার। সময় ঘনিয়ে আসায় মাঘের হাড় কাপাঁনো শীত উপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্ধন্ধী প্রার্থীরা। তবে এই উপজেলার মোট নয়টি ইউনিয়নের নয়টিতেই আওয়মীলীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন আওমীলীগ নেতা। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্বে অবস্থান নেওয়ায় তারা হয়েছেন বিদ্রোহী। বিদ্রোহী এই নেতাদের পক্ষে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই প্রকাশ্যে ও গোপনে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে জয়ী ও দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সরকার শামীম আহমেদ। এখানে মনোয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দুইজন। একজন হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্বা একেএম ফজলুল হক বাচ্চু(আনারস প্রতীক), অন্যজন হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার। তিনি ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
চরফরাদী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মান্নান। তিনি গত নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব উদ্দিন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
এগারসিন্দুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ নুরুজ্জামান বাবু। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বাহাদিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায়ী মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ ডিলার। তিনি মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
বুরুদিয়া ইউনিয়নে দলের মনোয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান। এখানেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দুইজন। একজন হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষক মোঃ কামাল উদ্দিন(চশমা প্রতীক)। অপরজন হলেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল হক রুবেল। তিনি ঘোড়া প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বয়সে তরুণ অবিবাহিত এই বিদ্রোহী প্রার্থী গত নিবাচনেও দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিবাচন করে বিজয়ী হয়েছেন।
পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নে দলের মনোয়ন পেয়েছেন বতমান ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাবুদ্দীন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। এদের মধ্যে একজন হলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন বাচ্চু (ঘোড়া প্রতীক)। অপরজন হলেন সম্প্রতি আওয়ামীলীগে যোগদান করা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ আরফান উদ্দিন(চশমা প্রতীক)। অন্যজন হলেন কালিয়াচাপড়া চিনি কল উচ্চ বিদ্যালয়ের (কাচিক) সভাপতি ও ব্যবসায়ী স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ এমদাদুল হক জোটন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ধন্তিতা করছেন।
হোসেন্দী ইউনিয়নে দলের মনোয়ন পেয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ হাদীউল ইসলাম। এখানেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন দুইজন। একজন হলেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান আকন্দ হামদু(আনারস প্রতীক)। অন্যজন হলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ নাজমুল কবীর আলমগীর। তিনি ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
নারান্দি ইউনিয়নে দলের মনোয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ মোছলেহ উদ্দিন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
চন্ডিপাশা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোয়ন দৌড়ে হেরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শামসুদ্দীন(আনারস প্রতীক)। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নম্বর সহ সভাপতি। এখানে দলের মনোয়ন পেয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মইন উদ্দিন।
সুখিয়া ইউনিয়নে দলের মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হামীদ টিটু। মনোয়ন দৌড়ে হেরে গিয়ে এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুল হক তোতা। প্রবীণ এই বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য।
উপজেলার নয় ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দলের মনোনীত প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা আরো জানান, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় এমনটি হয়েছে। ফলে দলের মনোনীত বেশিরভাগ প্রার্থী পরাজিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এতে দলের প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের
বহিষ্কারের জন্য বলা হলেও জেলা কমিটি তাদের বহিষ্কার করেনি।