আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
সারাদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সন্ধ্যায় এখন আর অন্যের ঘরে ফিরতে হবে না। ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র ফাতেমা খাতুন এখন প্রতিদিন ফিরতে পারবেন নিজ ঘরে। শুধু ঘরই নয়, থাকছে নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা।
ফাতেমা খাতুনের মতো ঈদ উপহার হিসেবে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ঘর পেলেন ১৮ জন অসহায় হতদরিদ্র পরিবার। মঙ্গলবার(২৬ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্ভোদন করেন। এ উপলক্ষ্যে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগীদের মাঝে জমিসহ পাকাঘরের কাগজপত্র তুলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এসব কাগজপত্র সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেন কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। নতুন ঘর পাওয়া এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষগুলোর চোখে মুখে এখন অনাবিল স্বপ্ন।
ঘর পাওয়ার আনন্দে পাকুন্দিয়া উপজেলার কয়ারখালী গ্রামের মৃত কেরামত আলীর স্ত্রী ভূমিহীন ফাতেমা খাতুনের চোখে ডেকেছে আনন্দ অশ্রুর বান। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে, জানতে চাইলে ফতেমা খাতুন বলেন, আমি ছেলে, নাতী ও বউকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে ছাপড়া বাইন্দা থাকছি। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে, আমি জমিসহ ইটের একখানা ঘর পাইমু। এই বয়সে ইটের ঘরে থাইকা মরতে পারমু। শেখ হাসিনা আমারে ঘর কইরা দিছেন। আমার ভবিষ্যৎ গইড়া দিছেন। ঘর পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁকে সুখ ও শান্তিতে রাখেন। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশে ভূমিহীনদের নিজস্ব ঠিকানা করে দেওয়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। “আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার”, মুজিব বর্ষে এই স্লোগান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারি খাস জমিতে ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার ১২৬ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে মুজিব বর্ষের ঘর প্রদান করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ১৮টি ঘর এবারের ঈদুল ফিতরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে প্রদান করা হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রওশন করিম বলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় তৃতীয় পর্যায়ে এবার ১৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আগের দুই পর্যায়ের ঘরের চেয়ে তৃতীয় পর্যায়ের প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ঘরের নকশায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব ঘরের প্রতিটিতে একটি রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে। যার ফলে ঘরগুলো টেকসই ও মজবুত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই অন্যের বাড়িতে বসবাস করতেন। তাঁরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাঁদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠি যাদের জমি ও ঘর নেই তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।