মিজানুর রহমানঃ
ছয় সদস্যের পরিবার যোগেশের। তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী সহ জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘরের চাল নেই, চারদিকের আস্তর খসে পড়ছে, বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায় ঘর, ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী সহ নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। বড় মেয়ে লিপির বয়স ১২ বছর। চার সন্তান সহ বর্তমানে কষ্টে দিনাতিপাত করছে তিনি।
সারাদিন কটিয়াদী সরকারী কলেজের সামনে জুতো সেলাইয়ের কাজ করে যা পান তা দিয়েই কোনো রকম চারটে ডাল ভাত খেয়ে পরিবার সহ বেঁচে আছেন তিনি। নিজের বসতভিটা নেই, থাকেন ইটের ভাটার সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত একটি পুরনো ঘরে। লাল মিয়া নামে কোনো এক ব্যক্তি লিজ নিয়েছিলেন এ জায়গাটি। এমনটাই বলছিলেন তিনি। মানুষের মল মূত্রে ভরা ভাঙা ঘরটি পরিস্কার করে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি। বিদ্যুৎ, পানি ও টয়লেট সুবিধা বঞ্চিত যোগেশের পরিবার। চলাচলের রাস্তাটিও সম্পূর্ন অনুপযোগী।
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামে ভৈরব- ময়মনসিংহ রোড থেকে দুই মিনিটের দুরত্বেই বসবাস করছেন ভূমিহীন পরিবারটি। তারা শঙ্কায় আছেন কখন জানি জায়গার মালিক ঘরটি ছাড়তে হুকুম করেন। জুতোর কাজ করে যা পান তা দিয়ে ছয় সদস্যের মুখে দুমুঠো ভাত জুটানোই কষ্টকর তার পক্ষে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার সামর্থ্য নেই তাই স্কুলেও পড়তে পারছে না চারজন শিশু। শিক্ষা, বাসস্থান, অন্ন, চিকিৎসা ও বিনোদনমূলক মৌলিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত চার শিশু সহ পরিবারটি।
সন্ধ্যা নামলেই ১০ টাকার কেরোসিনে যতক্ষণ কুপি জ্বলে ততক্ষণই আলো থাকে ঘরে। চারপাশ নির্জন ও জঙ্গল হওয়ায় মশা মাছির প্রচন্ড উৎপাতেই চটফট করে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে বিদ্যুৎহীন রাত কাটাতে হয় পরিবারটিকে। যোগেশের বাবা মার পৈত্রিক ভিটা বাড়ি নেই। নিম্নমানের আয়ের জন্য ভালো একটি বাসাও ভাড়া নিয়ে থাকতে পারছেন না। আশে পাশের কেউ ইচ্ছে করলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারে এ পরিবারটিকে, কিন্তু এ যুগে মানবতা বলতে কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না তাদের বিদ্যুৎহীন সম্পূর্ণ সু্বিধা বঞ্চিত জীবন যাপন দেখে। সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর চান যোগেশ ও তার পরিবার। সরকারী বেসরকারী সহযোগিতা বঞ্চিত পরিবারটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায় ও সন্তানদের স্কুলে পড়াতে চায়।