স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আশামনি নামের এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা মামলার সকল আসামীকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা জারইতলা ইউনিয়নের দক্ষিন জাল্লাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন পালন করেন তারা।
মামলার এজাহারের বিবরণে জানা যায় , গত ২৭ জুন রাত আটটার দিকে বাবার বাড়ি দক্ষিণ জাল্লাবাদ থেকে স্বামীর বাড়ি সাহাপুরে যাচ্ছিলো আশামনি। এ সময় সাহাপুর মোড়ে পৌঁছামাত্রই আসামিরা তার মুখে গামছা পেঁচিয়ে একটি পতিত জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে তার স্বামীর সহযোগিতায় আসামিরা পালাক্রমে রাতভর ধর্ষণ করে। পরদিন সকাল ৮ টার দিকে স্থানীয়রা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে খবর দিলে তারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে অবস্থা গুরুতর দেখে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুন রাত ২ টার দিকে আশামনি মারা যায়। এ ঘটনায় সকালে আশামনির মামা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন/চারজনকে আসামি করে নিকলী থানায় মামলা দায়ের করেন।
প্রতিবেশী মোরশেদা খাতুন সেদিন আশামনিকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, আশামনি মৃত্যুর আগে যাদের নাম বলে গেছে তাদের নামেই জাহাঙ্গীর ভাই মামলা করেছেন। মামলা করার পর চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরপর থেকে কারাগারে থাকা আসামিদের স্বজনরা এবং বাহিরে থাকা আসামিরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
আশামনির মা ফাহিমা আক্তার বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। দিন আনি দিন খাই। আমার মেয়েটাকে নরপশুরা ধর্ষণ করে মেরে ফেলছে। বিচারের আশায় মামলা করেছি। এখন দেখি মামলা করে আরও বড় বিপদে পড়ছি। আমার মেয়ের মামলার বাদী হয়ে আমার ভাই বাড়িতে আসতে পারছে না। তাকে আসামিরা আর তাদের স্বজনরা রাস্তাঘাটে লাঞ্চিত করে। মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এই অবস্থায় আমার ভাইসহ আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিয়ের পর থেকেই আশামনির স্বামী লালচান তাকে পতিতাবৃত্তি করার জন্য বলতো। আসামিরাও তাকে বিভিন্ন সময়ে কুইঙ্গিত দিতো। এ কাজে সে কখনোই রাজি ছিল না। এ কারণেই তাকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বকভাবে ধর্ষণ করেছে। সংঘদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে সে মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলার পরেই তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরপর থেকেই কারাগারে থাকা আসামিদের স্বজনরা আর বাহিরে থাকা আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। তিনি বলেন, মামলার ৩ নং আসামি সুকন মিয়ার বোন জামাই চাঁন মিয়া ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক । সে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে আবার হুমকিও দিচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশকে জানালে তারাও গুরুত্ব দেয়না। এই অবস্থায় খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলার পরেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার অগ্রগতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে।