নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দেশের শস্য ভান্ডার খ্যাত কিশোরগঞ্জের হাওরে বোরো ধানের বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের। তবে আগাম বন্যা, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কৃষি যন্ত্রপাতি, সার কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বাড়ায় শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ধান চাষে আগ্রহ কমেছে চাষীদের।
নিকলী উপজেলার কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্তমানে ডিজেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে জমি চাষ, সেচ ও শ্রমিকের মূল্য। বাধ্য হয়ে খরচ পুষিয়ে উঠতে নির্দিষ্ট সময়ে ধান রোপণের লক্ষ্যে তীব্র শীত উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এরই মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। শাহজাহানের মতো হাজারো কৃষক পেটে পাথর বেঁধে বছরের একমাত্র ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে দিন রাত এক করে দিচ্ছেন।
এবছর বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে পানি নামতে দেরি হলেও কুয়াশা কিছুটা কম থাকায় বোরো চাষিরা অত্যন্ত খুশি। বর্তমানে আবহাওয়া বীজ বপনের অনুকুলে থাকায় একটু আগে-ভাগে বোরোর বীজতলা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। কেউ পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ, পানি সেচ, বীজতলা সমান করা, বীজ বপনে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে অগভীর নদী, হাওর থেকে পানি নিস্কাশনের প্রতিবন্ধকতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধি হওয়ায় দিন দিন হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল উৎপাদনে নানান বাঁধার সৃষ্টি করছে। সেই সাথে বেড়েছে বীজের দাম, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মহাজন ও বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থতা, শ্রমিকের মজুরী, সার-ডিজেল ও কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য বাড়ায় আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকরা শঙ্কায় আছেন। এ কারণে বিগত বছরের তুলনায় এবছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আব্দুস সাত্তার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হবে। এক লাখ চাষীকে বোরো আবাদে সরকারের পক্ষ থেকে প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কৃষক দুই কেজি করে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ও ৫০ হাজার কৃষক পাঁচ কেজি করে উপসি জাতের ধানের বীজ পাবে। তাছাড়া ১০ কেজি করে ডিওপি সার ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হবে। হাওর,নন-হাওর ও সেমি হাওর নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা বিভক্ত। উচু এলাকায় আমন ধানের চাষ হওয়ায় এখনও পুরোদমে বোরা ধানের বীজতলা তৈরী না হলেও হাওর এলাকায় বীজ বপন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে হাইব্রিড ধানের ৩২০ হেক্টর, উপসি ধানের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৩৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরী করা হয়েছে।