ক্লাস ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। নিয়মিতই উপস্থিত হয়েছেন ক্লাস ও পরীক্ষায়। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় করেছে এসএসসির রেজিস্ট্রেশন। টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফরম ফিলাপ করতে গিয়ে জানতে পারে রেজিস্ট্রেশনই হয়নি ফারিয়া আক্তারের। এমনই ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ডিক্রিকান্দা লাভুমুন্সি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ফারিয়া আক্তারের। ফারিয়ার একই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নূর ইসলাম মেয়ের।
জানা গেছে, টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর ফরম ফিলাপের ফি নিয়ে মায়ের সাথে মাদ্রাসায় যায় দাখিল পরীক্ষার্থী ফারিয়া। যাবতীয় ফি জমা দেওয়ার পর মাদ্রাসা থেকে জানানো হয় এ বছর তার পরীক্ষা দেওয়া হবেনা। নবম শ্রেণিতে নাকি তার রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। তাই নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে ২০২৬ সনে পরীক্ষা দিতে হবে। টাকা ফেরত দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। এ কথা শুনার পর ফারিয়ার পায়ের তলার মটি সরে যায়, মাথায় ভেঙে পড়ে আকাশ। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন ফারিয়া। শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন নাওয়া খাওয়া। মাদ্রাসায় গিয়ে সুপারের দ্বারস্থ হয় ফারিয়ার বাবা-মা। অনেক অনুনয় বিনয় করেন সুপারকে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার অপারগতার কথা প্রকাশ করলে ঘটনাটি জানাজানি গ্রামজুড়ে। মাদ্রাসা সুপার ও কর্তৃপক্ষের এমন গাফেলতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। যাদের কারণে ফারিয়ার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হতে চলেছে তাদের বিচার অথবা ফারিয়ার ফরম ফিলাপের ব্যবস্থা করা দাবি করে আজ রবিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে মাদ্রাসার সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সহপাঠী ও এলাকাবাসীরা। এ সময় তারা মাদ্রাসার সুপারের নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথাও তুলে ধরেন। মানবন্ধনে কথা বলতে গিয়ে ফারিয়া ও তার মা হাবিবা আক্তার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এসময় তার জানান, এই প্রতিষ্ঠানই পঞ্চম শ্রেণি থেকে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন দাখিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু নবম শ্রেণিতে তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি, সেটা সুপার বা শিক্ষকদের কেউ কোনদিন তাদপরকে বলেনি। গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাইদুর রহমান জানান, সুপারের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মাদ্রাসাটি আজ ধ্বংসের পথে। সেখানে লেখাপড়া হয়না। শিক্ষকরা ক্লাস না করে লুডু খেলে। মাস শেষে বেতন নেয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল বলেন, ফারিয়া যদি দাখিল পরীক্ষা না দিতে পারে তাহলে তার শিক্ষা জীনব অনিশ্চিত হয়ে পড়েবে। এর দায়ভার সুপারকে নিতে হবে এবং সুপারকে পদত্যাগ করতে হবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, ফারিয়ার রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার বিষয়টি গত ২৮ ডিসেম্বর তিনি জানতে পারেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন সোমবারে ভিতরে একটা ব্যবস্থা হবে। কার অবহেলায় এমনটি ঘটেছে জানতে চাইলে সুপার নিজেই দায়ভার স্বীকার করে বলেন, শ্রেণি শিক্ষক তাকে বিষয়টি জানালে আজ এমন পরিস্থিতি হতো না। এদিকে ফারিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার দাখিল পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যাদের অবহেলায় তার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হতে চলেছে, তাদের বিচার দাবি করে আজ রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুন নাহার মাকছুদা জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।