ব্যাক্তিগত টাকায় ঘর উপহার দিলেন গণ গ্রন্থাগারের মহাপরিচালক

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
পেশায় একজন বুট-মুড়ি বিক্রেতা। নাম রতন চন্দ্র দাস। বয়স ৪৫। সারাদিন ফেরি করে যা পায় তা দিয়েই কোনোরকমে চলে চার জনের সংসার। নূন আনতে পান্থা ফুরায় এমন অবস্থা। অসংখ্য পলিথিনে মোড়ানো উপুর হয়ে পরে থাকা ছাপড়া ঘরটি। এতেই বসবাস ছিল তাদের। শীতকালে কুয়াশা আর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে ভাসতো পুরো ঘর। রাতে ঠিকমতো ঘুমুতে পারতেননা। কখন ঘরটি বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়, ভয়ে আতংকে ছিলেন তারা। যেখানে রতন চন্দ্রের তিনবেলা ভাতই জুটেনা, সেখানে এই জড়াজীর্ণ ঘরটি মেরামত করার মতো টাকাই বা পাবে কোথায়। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছিলেন তিনি।

বিষয়টি নজরে আসে একই এলাকার আলমদী গ্রামের মানবকল্যাণ সংস্থা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তারা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরীকে অবহিত করেন। তাদের কথামতো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন চন্দ্র দাসের বাড়িটি সরেজমিনে দেখতে যান। সরেজমিনে দেখে রতন চন্দ্রের পরিবারের দূরবস্থার বিষয়টি অনুধাবন করেন তিনি। পরে তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবু বকর সিদ্দিককে জানান। মহাপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বাহাদিয়া গ্রামে। রতন চন্দ্র দাসের কষ্টের কথা শুনে তিনিও বাড়িটি সরেজমিনে দেখেন। পরে তিনি তাঁর ব্যাক্তিগত টাকায় প্রধানমন্ত্রীর ঘরের আদলে রতন চন্দ্রের এক টুকরো জমিতে শৌচাগার, রান্নাঘর ও একটি টিউবওয়েলসহ রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেন তিনি।

নববর্ষ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী মহাপরিচালকের পক্ষে ঘরটি বুঝিয়ে দেন।

রতন চন্দ্র দাসের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের কাহেতেরদিয়া গ্রামে। তিনি পেশায় একজন বুট-মুড়ি বিক্রেতা। তার স্ত্রীর নাম দিপালী। তিনি একজন গৃহিণী। ছেলে দিপান্তর(১১) ও দীপ্ত(৯) নামের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
ঘর পেয়ে রতন চন্দ্র দাস বলেন, ঘর পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে, সন্তানদের নিয়ে পাকা ঘরে থাকতে পারব। সারাজীবন একটি ভাঙ্গা ঘরে থেকেছি। বৃষ্টির পানিতে ঘর ভরে যেত। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। ঘরটি মেরামত করার মতো কোনো টাকা-পয়সাও আমার হাতে ছিলনা। আমি স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ যেন স্যারকে পরকালে শান্তিতে রাখেন।

আলমদী গ্রামের মানব কল্যাণ সংস্থার সমন্বয়কারী ওয়াজেদ নবী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে আমরা ইএনও স্যারকে জানাই। পরে ইএনও স্যারের প্রচেষ্টায় গণগ্রন্থাগারের মহাপরিচালক স্যার ঘরটি নির্মাণ করে দেন। নিজের টাকায় ঘরটি নির্মাণ করে দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন মহাপরিচালক স্যার।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, মহাপরিচালক স্যার আমাকে আগেই বলে রেখেছিলেন যে, জায়গা আছে-ঘর নেই। এমন কোনো অসহায় পরিবার যদি পাওয়া যায় তাহলে স্যারকে জানাতে। স্যার নিজের টাকায় একটি ঘর নির্মাণ করে দিবেন। তাই রতন চন্দ্রের ঘরটি দেখে আমি স্যারকে জানাই। স্যার নিজে এসে রতন চন্দ্রের ঘরটি দেখেন। পরে স্যারের ব্যাক্তিগত টাকায় ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। স্যারের মতো আমাদের সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তিরা যদি এগিয়ে আসতেন তাহলে সমাজে কোনো মানুষ অবহেলিত থাকত না। সামর্থবান সবাইকে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।

Share.