আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
ছোট্ট একটি গ্রাম। পুরো গ্রাম জুড়েই লিচু বাগান। বাগানের গাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা। গাছের নিচে রয়েছে সারি সারি মৌমাছির বাক্স। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছিরা উড়ে গিয়ে বসছে মুকুলে। মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা আবার ফিরছে ওই বাক্সে। সপ্তাহ পর পর মৌমাছির বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছে চাষিরা। এটা কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামের চিত্র। গত কয়েক বছর ধরে ওই গ্রামে লিচু চাষের পাশাপাশি মধু চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন মধু চাষ করে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লিচুর মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে একদিকে যেমন লিচুর ফলন বাড়ছে, তেমনি অপরদিকে মধু সংগ্রহ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এ চাষে লিচু চাষি ও মৌ চাষি দুজনই লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রাম। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে ও রাস্তার দুই পাশে সারি সারি লিচু গাছ। সব মিলিয়ে গ্রামটিতে প্রায় পাঁচ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। এছাড়াও গ্রামটিকে ঘিরে এর আশপাশের এলাকায়ও লিচু বাগান গড়ে ওঠেছে। এ গ্রামে প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌচাষিরা মৌ বাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে আসেন। যারা এ মৌসুমে লিচু বাগান থেকে মধু চাষ করে ভালো লাভবান হচ্ছেন।
গ্রামটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এবছরও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছের ডাল-পালা। গাছের নিচে সারি সারি মৌ বাক্স বসিয়েছেন খামারিরা। মৌ বাক্স ঘিরে চলছে তাদের কর্মকান্ড। এছাড়াও মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করতে বাগানের গাছে গাছে মধুর গুনাগুন ও উপকারিতা নিয়ে লেখা সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন ও ব্যানার টানিয়ে রেখেছে খামারিরা।
গাজীপুর থেকে মেসার্স মনির মৌ খামারের একদল কর্মী এক সপ্তাহ আগে মৌ বাক্স নিয়ে মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামে এসেছেন মধু সংগ্রহ করতে। ওই খামারের সহকারি পরিচালক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, লিচু ফুলের মধুর চাহিদা খুবই বেশি। তাই গত ১০ বছর ধরে এ মৌসুমে আমরা গাজিপুর থেকে এ গ্রামে আসি মধু সংগ্রহ করতে। প্রায় একমাস এখানে থেকে মধু সংগ্রহ করব। মধু সংগ্রহের জন্য এ বছর ৭০টি মৌ বাক্স এখানে এনেছি। প্রতি সপ্তাহে একবার বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকি। সপ্তাহে কমপক্ষে চারমণ মধু পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু আমরা ৬০০ টাকায় বিক্রি করছি।
মঙ্গলবাড়িয়া মৌ খামারের মালিক মো. ছফির উদ্দিন লিমন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমি লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করছি। প্রতিদিনই এ গ্রামে শত শত লোক আসে লিচু ফুলের খাঁটি মধু কিনতে। তিনি বলেন, তার ৬৫ টি মৌ বাক্স রয়েছে। যা থেকে সপ্তাহে চার মণের মতো মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি মধু তিনি খুচরা বাজারে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বলেন জানান তিনি।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু বাগানের মালিক মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, লিচু ফুলের পরাগায়ন হলে ফলন ভালো হয়। তাই প্রতি বছর এ মৌসুমে আমরা মৌ খামারিদের খবর দিয়ে এনে থাকি। তাদের আমরা সার্বিক নিরাপত্তাও দিয়ে থাকি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর ই আলম বলেন, লিচু একটি পরাগায়িত ফল। লিচু বাগানে মৌ বাক্স বসালে মৌমাছিরা লিচুর ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে লিচুর ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। ফলে লিচুর ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর আকার ও আকৃতিও বড় হয়। এছাড়াও লিচু ফুলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ও অনেকাংশে কমে যায়। লিচু বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করে লিচু চাষি ও মৌ চাষি দুজনই লাভবান হচ্ছেন।