স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চিলাকাড়া রাশিদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার মাঠে এলাকার শিশুদের খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চিলাকারা ঈদগাহ মাঠের পাশে অবস্থান কর্মসূচি করে এলাকার শিশুরা। ইতোমধ্যে রাতের অবস্থান কর্মসূচির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, অবস্থান কর্মসূচিতে শিশুরা চিলাকাড়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা মাঠের গেইটের তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে হাতে লেখা বিভিন্ন লিফলেট নিয়ে অবস্থান করছেন। লিফলেটে লেখা রয়েছে, খেলার জন্য উন্মুক্ত মাঠ চাই, এক দফা-এক দাবি, মাঠ চাই-মাঠ চাইসহ বিভিন্ন স্লোগান। সেখানে জাতীয় শ্রমিক লীগ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ বাচ্চাদের সাথে কথা বলে বুঝানোর চেষ্টা করছেন।
আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, শিশুরা খেলার মাঠের তালা খুলে দেওয়ার জন্য অবস্থান করছে এমন সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে যায় বাচ্চাদের সাথে কথা বলি। তাদেরকে মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এমন আশ^াস দিলে বাচ্চারা বাড়ি চলে যায়। চিলাকাড়া রাশিদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটি সরকারি এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসা। সেখানে সুপার মাদ্রাসার মাঠে এলাকার বাচ্চাদের খেলাধুলা করার জন্য নিষেধ দিয়ে গেইটে তালা দিয়ে দিয়েছেন। মাঠ খেলার জন্য, গরু ছড়ানোর জন্য না।
চন্ডিপাশা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, গত ২মাস যাবত এলাকার বাচ্চাদেরকে মাঠে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না। গেইটে তালা দিয়ে রাখা হয়। তালা দেওয়ার পরও ছোট একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাচ্চারা মাঠের ভেতরে প্রবেশ করে খেলাধুলা করতো। সেই জায়গাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য বাচ্চারা এলাকায় মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি করেছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি মহিলা মাদ্রাসা সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করলে সমস্যা হয়। মহিলা মাদ্রাসা সেখানে পর্দার ব্যাপার আছে। গত ( ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার ) ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসি নিয়ে মিটিং করে খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেহেতু মহিলা মাদ্রাসা বিভিন্ন জায়গা থেকে মহিলারা আসে সেহেতু খেলাধুলার জন্য দেওয়া যায় না। আমি তো মাদ্রাসার সুপার আমার একার পক্ষে কিছু করার নাই। বাচ্চারা বিকেলে খেলাধুলা করে তখন কি মাদ্রাসা খোলা থাকে? এমন প্রশ্নে সুপার বলেন, না, কিন্তু সেটাতো মহিলা মাদ্রাসা তাছাড়া মাদ্রাসার জানালায় গ্লাস লাগানো সেটাতো খেলতে গেলে ভেঙ্গে যাবে, মাদ্রাসার পরিবেশ ঠিক থাকে না। মাদ্রাসার সভাপতিও খেলার জন্য দিচ্ছেন না।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, এইটা মহিলা মাদ্রাসা আর এখানে যারা খেলতে যায় তার প্রাপ্ত বয়স্ক। এখানে ছেলেদের খেলতে অনুমোদন দেওয়া যায় না। তারা দেয়ালে আজে-বাজে কথা লিখে রাখতে পারে। যেহেতু বাচ্চারা প্রাপ্ত বয়স্ক সেহেতু খেলতে দেওয়া যাবে না। আর এই বিষয়টি মাদ্রাসার কমিটি’র সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চন্ডিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, বিকেলে মাদ্রাসার ছাত্রী’রা যখন চলে যায় তখন ছেলেরা কেন খেলাধুলা করতে পারবে না সেটা আমি জানি না। আমি এখন ঢাকায় আছি সেখান থেকে ফিরে এসে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার মাকছুদা বলেন, শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা প্রয়োজন আছে। বালিকা মাদ্রাসা হলে অন্যরা খেলতে পারবে না এমন কোন বিধি নিষেধ নাই। বাচ্চারা ছুটির পর খেলাধুলা করে তারা খেলতে না পারলে কোথায় যাবে। আমরা মাদ্রাসা সুপারের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখব।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখব।