স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্র লীগের কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা ছাত্র লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন। পরে জেলা শহরে ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে
লিখিত বক্তব্যে লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ২১ (ক) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জেলা কমিটি ১ বছরের জন্য সম্মেলনের মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হয়। দুঃখের বিষয় অজ্ঞাত কারনে কোনো রূপ যাচাই বাচাই, নেতৃত্বের দক্ষত মূল্যায়ন না করে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গঠনতন্ত্র না মেনে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি, মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খানকে সাধারণ সম্পাদক ও লুৎফর রহমান নয়নকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়।
দলীয় শৃঙ্খলাবোধ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সম্মানার্থে আমরা সেই কমিটি মেনে নেই। সেই সাথে সর্বমহলের প্রতি গভীর আশাবাদ বজায় রাখি যে যোগ্যতা অনুসারে পদ বঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে যর্থাথ মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। আমার জানা মতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সভাপতি মোঃ সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান কমিটি পূর্ণাঙ্গ করনের জন্য বারবার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করার নজির বিহীন তালবাহানা ও দুঃসাহস দেখাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান।
৩ বছর ৭ মাস ১৩ দিন হয়ে যাওয়ার পরেও পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরই মধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করার নামে অছাত্র, বিবাহিত, মাদকাসক্ত এবং বিএনপি-জামায়াত শিবিরের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত কমিটি গুলো হলো তাড়াইল উপজেলা ছাত্রলীগ, পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ, অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগ, নিকলী উপজেলা ছাত্রলীগ, হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগ।
অভিযোগ করে নয়ন আরও বলেন, কিছু দিন পূর্বে তাড়াইল উপজেলা ছাত্রলীগের তথা কথিত কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় শিবির কর্মী ইসমাইল সিরাজী। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার ব্যাক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডি থেকে শোক-বেদনা প্রকাশ করে বারবার পোষ্ট দিতে থাকে। এই একই কারণে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন ইউনিটের সাতজন নেতা কর্মীকে দল থেকে অব্যাহতি দিলেও তাড়াইল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, এখানে অর্থনৈতিক লেনদেন সুস্পষ্ট।
শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি বাণিজ্য, টেন্ডার বাজি, চাঁদা বাজি, মাদক ব্যবসা, থানার দালালি, অটো-সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যু, নারী কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত। তাদের এইসব অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের উপর কিছু ক্ষমতাবান মহল এর ছত্র ছায়ায় মামলা হামলা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর একটি ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ছাত্রলীগ গড়ে তুলতে গিয়ে অসংখ্য নেতা কর্মী জেল জুলুম সহ্য করেছে। আজকে এই সংগঠনটি কিশোরগঞ্জে ধ্বংসের পথে। এই অবস্থায় গঠনতান্ত্রিক ভাবে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ ।
জেলা ছাত্র লীগের সাবেক আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক তানিম ইসলাম বলেন, আগামী জানুয়ারীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেই নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয় লাভ করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ দিয়ে সেই ভূমিকা পালন করা সম্ভব না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অনুরোধ রইলো অতি দ্রুত মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করা জন্য নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হোক।
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ২০২০ সালে কমিটি ঘোষনার এক মাস পর থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর সাংগঠনিক কোন কাজ করা যায়নি। যার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫/২০ বছর যাবত কোন কমিটি নাই। এই জন্য আমরা আগে উপজেলা কমিটি গুলো করছি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে। যুদ্ধাপরাধি মামলার আসামি দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে তাড়াইল উপজেলা ছাত্র লীগের সভাপতি ঈসমাইল সিরাজির ফেসবুক স্টেটাসের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ঈসমাইল সিরাজির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে জেলা ছাত্র লীগের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে। স্টোটাস দেওয়ার বিষয়টি সত্যতা না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন ঘটনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাতজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এসময় জেলা ছাত্র লীগের সাকে সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুনায়েদ, সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম স্বপন, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম রতন, সাবেক গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শাওন আহমেদ নিলয়, সাবেক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আকাশ খান, সাবেক উপ প্রচার সম্পাদক কাজী আবেদীন সোলেমান, সহ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক উপস্থিত ছিলেন।